হলফনামা রাজ্যের

সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ চাওয়ার কোনও বৈধ অধিকারই নেই: রাজ্য

সরকারের হলফনামায় আরও জানানো হয়, রাজ্যের তিন লক্ষ ৩৩ হাজার কোটিরও বেশি টাকার দেনা রয়েছে। সরকারের যা রাজস্ব আদায় হয়, তার দেড় গুণ খরচ হয়ে যায় সরকারি কর্মীদের বেতন, পেনশন এবং ঋণের সুদ মেটাতে। এত কিছুর পরেও কর্মীদের নিয়মিত বকেয়া ডিএ দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৫
Share:

রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।—ফাইল চিত্র।

রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছিল, ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। আর রাজ্য সরকার নিজেরা কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানাল, সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা চাওয়ার কোনও বৈধ অধিকারই নেই।

Advertisement

সরকারের হলফনামায় আরও জানানো হয়, রাজ্যের তিন লক্ষ ৩৩ হাজার কোটিরও বেশি টাকার দেনা রয়েছে। সরকারের যা রাজস্ব আদায় হয়, তার দেড় গুণ খরচ হয়ে যায় সরকারি কর্মীদের বেতন, পেনশন এবং ঋণের সুদ মেটাতে। এত কিছুর পরেও কর্মীদের নিয়মিত বকেয়া ডিএ দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

আরও পড়ুন: প্রভাবশালীরা বাংলা বলেন কই, আক্ষেপ সভার

Advertisement

বকেয়া ডিএ নিয়ে যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের আইনজীবী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার জানিয়েছে, তিন লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা ঋণ নিয়েছে বলে তারা বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দিতে পারছে না। এ কেমন যুক্তি! সরকার ধার করেছে বলে বাড়ির লোকেরা বেতন পাবে না! এটা তো কর্মীদের অধিকার।’’ প্রবীরবাবুর বক্তব্য, সরকার তাদের হলফনামায় সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা চাওয়ার আইনি অধিকার নেই বলে যে-দাবি করেছে, তা-ও ঠিক নয়। ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে এই বিষয়ে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।

রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ পাওনা হয়েছে ৫৪%। অভিযোগ, বকেয়া মেটানোর দাবি জানিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল কর্মী সংগঠন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই বকেয়া ডিএ-র দাবিতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)-এ মামলা দায়ের করে সরকারি কর্মীদের সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এবং ইউনিটি ফোরাম। স্যাট জানিয়ে দেয়, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্যের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করবে। স্যাটের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গত ১৫ মার্চ হাইকোর্টে মামলা করা হয়।

সেই মামলাতেই ২৮ অগস্টের মধ্যে হলফনামা পেশ করে সরকারকে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ দফতরের ডেপুটি সচিব উজ্জ্বল গোস্বামী সেই হলফনামা পেশ করেন। তাতে তিনি জানান, সরকারি কর্মীদের বেতনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ এবং সার্কভুক্ত দেশে ঘোরার খরচও দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়াও সরকারকে পঞ্চায়েত, পুরসভার মতো স্বশাসিত সংস্থা, স্কুল-কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচ বহন করতে হয়। এর ফলে গত পাঁচ বছরে রাজস্ব খাতে খরচ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার ঠিক সময়ে কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধে দিয়ে চলেছে।

এ দিনই দ্রুত রিপোর্ট পেশের দাবিতে ১৭ নভেম্বর বেতন কমিশনের অফিসে অভিযান করার ডাক দিয়েছে সরকার-বিরোধী কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজয় সিন্‌হা বলেন, ‘‘৫৪% ডিএ বকেয়া। তাতেও সরকারের হেলদোল নেই।’’ এ দিন মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভায় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার হাজির ছিলেন। তার উল্লেখ করে বিজয়বাবু মন্তব্য করেন, ‘‘উনি (অভিরূপবাবু) নিরপেক্ষ নন। উনি কর্মচারীদের জন্য ভাল কিছু করবেন না।’’ অল ইন্ডিয়া স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা এ শ্রীকুমার বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বেতন কমিশন ঘোষণার পরে বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement