School: গরমের হাত থেকে পড়ুয়াদের বাঁচাতে ‘মর্নিং স্কুল’ চালু করার নির্দেশ শিক্ষা দফতরের

মর্নিং স্কুল চালু হলেও পড়াশোনায় যাতে কোনও রকম ঘাটতি না-হয়, সেটা দেখতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪৪
Share:

গরমের জন্য স্কুলগুলিকে নির্দেশিকা দিচ্ছে রাজ্য। ফাইল চিত্র।

গ্রীষ্ম প্রখর থেকে প্রখরতর হয়ে ওঠায় গরমের ছুটি এগিয়ে আনার দাবি উঠছিল রাজ্যের সর্বত্র। সেই দাবির সুরাহা না-হলেও বিকাশ ভবন সোমবার নির্দেশ দিয়েছে, গরমে সুস্থ থেকে পড়ুয়ারা যাতে স্কুলে যেতে পারে, সেই জন্য প্রাথমিক, এসএসকে, এমএসকে থেকে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক— সব স্তরেই ‘মর্নিং স্কুল’ অর্থাৎ সকালে স্কুল চালু করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, মর্নিং স্কুল চালু হলেও পড়াশোনায় যাতে কোনও রকম ঘাটতি না-হয়, সেটা দেখতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। সব ক্লাস যাতে নির্দিষ্ট সময়ে হয়, তা নিশ্চিত করার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁদেরই। তবে কবে থেকে সকালে স্কুল চালু হবে, নির্দেশিকায় সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।

কোনও স্কুল যদি ‘মর্নিং স্কুল’ হয়ে উঠতে না-পারে অর্থাৎ সকালে পঠনপাঠন চালু করতে না-পারে, সে-ক্ষেত্রে গরম থেকে রক্ষা পেতে পড়ুয়াদের কী কী করতে হবে এবং স্কুলকে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, স্বাস্থ্য অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে তা ঠিক করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে বিকাশ ভবনের নির্দেশিকায়। জানানো হয়েছে, গরমের মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।

শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, দীর্ঘস্থায়ী অতিমারিতে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরে এখনই ফের স্কুলে ছুটি না-দিয়ে পড়াশোনা যথাসম্ভব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থা। তবে গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনার দাবি থামছে না। আবার আগাম গরমের ছুটির দাবি যেমন আছে, তার বিরোধিতাও কম নেই।

Advertisement

তবে পাল্লা আগাম ছুটির দিকেই ঝুঁকে আছে বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। বহু প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাই গরমের ছুটি এগিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, তীব্র দহনের মধ্যে নিয়মিত ক্লাস করতে ছাত্রছাত্রীরা পরিত্রাহি ডাক ছাড়ছে। সর্বোপরি চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রচণ্ড গরমে পড়ুয়া থেকে পরীক্ষার্থী, সকলেরই হাঁসফাঁস দশা। অসুস্থও হয়ে পড়ছে অনেকে। কোথাও কোথাও স্কুল চলাকালীন লোডশেডিং হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই সময়ে পরিস্থিতি অবর্ণনীয় হয়ে উঠছে। দুঃসহ গরমে শরীরে জল কমে গিয়ে দেখা দিচ্ছে ‘ডিহাইড্রেশন’-এর সমস্যাও। এর মধ্যে জলকষ্টের অভিযোগও উঠেছে অনেক স্কুলে। আগাম গ্রীষ্মের ছুটিই এই সব সমস্যার সুরাহা হতে পারে বলে বহু স্কুল-প্রধানের অভিমত। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোমবার বলেন, ‘‘এই নয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে পুরো পরিস্থিতি জানাব।’’

শিক্ষার করোনা-ক্ষত নিরাময়ের তাগিদে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি অংশ অবশ্য চাইছেন না, ছুটি এগিয়ে আসুক। তাঁদের বক্তব্য, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। অচিরেই শুরু হতে চলেছে বিভিন্ন শ্রেণির ‘ফার্স্ট সামেটিভ’ বা প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন। চলবে ৭ মে পর্যন্ত। সুতরাং তার আগে গরমের ছুটি দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। এর সঙ্গে রয়েছে একাদশের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষাও। অনেক শিক্ষকের বক্তব্য, করোনার জন্য স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরুই হয়েছে ফেব্রুয়ারির গোড়ায়। পড়ুয়ারা পড়াশোনা ও পরীক্ষা দু’টিতেই পিছিয়ে আছে। গরমের ছুটি এগিয়ে এলে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হবে পড়ুয়ারাই।
কিন্তু প্রকৃতির মেজাজ উত্তরোত্তর সপ্তমে চড়ছে। তাতে শান্তিজল ছিটোনোর মতো কালবৈশাখীরও দেখা নেই। প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় আগে পড়া, না, গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার পথ খোঁজাটাই জরুরি? সরকারি স্কুলে এ বার গরমের ছুটি পড়ার কথা ২৪ মে। চলবে ৪ জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ গরমের ছুটি ধার্য করা হয়েছে মাত্র ১১ দিন। প্রশ্ন উঠছে, এখনই যা অবস্থা, গরমের ছুটির জন্য কি ২৪ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে?

Advertisement

বীরভূমের লাভপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা মুখোপাধ্যায় জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে এসেই পড়ুয়াদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। যে-দিন নেই পরীক্ষা থাকছে না, সে-দিন চলছে সাধারণ ক্লাস। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেই ২৮ এপ্রিল থেকে পুরোদমে ক্লাস চলার কথা। মনীষাদেবী মনে করেন, গরমের ছুটি এগিয়ে এনে এখনই ১১ দিনের ছুটি দিয়ে দেওয়া দরকার।

পুরুলিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক দেবদাস মাজী জানান, তাঁদের জেলার বেশির ভাগ স্কুলই এখন সকাল সকাল শুরু হচ্ছে। কিন্তু তাতেও রৌদ্রের তেজ এড়াতে না-পেরে পড়ুয়ারা কাহিল হয়ে পড়ছে। মর্নিং স্কুল শেষ হচ্ছে বেলা ১১টা নাগাদ। তার মধ্যেই ঝাঁঝাঁ রোদ। মাটি তেতেপুড়ে আগুন। দেবদাসবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে একটি মাত্র নলকূপ। দু’ফুট নীচে নেমে সেই নলকূপ থেকে জল নিতে হয়।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি স্কুলের শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারীর মতো যাঁরা অন্তত মর্নিং স্কুলের দাবি তুলেছিলেন, বিকাশ ভবন তারই ব্যবস্থা করেছে।’’

গত বছর করোনা পরিস্থিতি একটু ভাল হওয়ার পরে স্কুল খুলেছিল। কিন্তু ফের করোনা এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরম বাড়ায় আগেভাগেই গরমের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তারও আগে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ সালে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছিল অনেকটাই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘কোনও বারেই তো এত দেরি করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয় না। তাই আগাম গরমের ছুটি দিতে অসুবিধা হয় না। প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নও আগে হয়ে যায়। এ বার তো সবই দেরিতে চলছে। তবে প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নের পরেই গরমের ছুটি দিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন