‘রংবাজি’তে সবুজ, শেষ বাজিতে কে?

শ্যামলে শ্যামল কিংবা সবুজে সবুজ। খোলা বস্তার সবুজ গুঁড়োর ছাপ পড়েছে হাতে-মুখে-নাকে। এত সবুজ মেখেও অবুঝ মনকে বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ী মহম্মদ হাফিজ, সমীরণ পালেরা।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:৪২
Share:

বড়বাজারে রং বাজার। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

শ্যামলে শ্যামল কিংবা সবুজে সবুজ। খোলা বস্তার সবুজ গুঁড়োর ছাপ পড়েছে হাতে-মুখে-নাকে। এত সবুজ মেখেও অবুঝ মনকে বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ী মহম্মদ হাফিজ, সমীরণ পালেরা।

Advertisement

পাঁচ বছর আগের অভিজ্ঞতায় একটা চোরা ভয় কাজ করছে বড়বাজারে আবিরের পাইকারি বাজারে। ফের যদি হিসেবের গোলমাল হয়। সে বারও দোলের গন্ধে ভোটের গন্ধ মিশেছিল বাতাসে। আর ভোটের ফল কী হতে চলেছে, তা যেন আগাম বুঝতে গিয়েই কেলেঙ্কারি আবিরের বাজারে। আবির কারবারিরা বলছিলেন, ‘‘৩৪ বছরের ব্যাপার তো! সে বার বুঝলেন, রাজ্য জুড়ে এত ভবিষ্যদ্বাণী সত্ত্বেও আমরা কিছুতে বিশ্বাস করিনি, সত্যি রাজ্যে লালেরা হেরেই যাবে।’’ তাই সে বারও মোটের উপরে লাল আবিরের জোগানটাই বেশি ছিল। বাম রাজনৈতিক কর্মীরাও দল বেঁধে এসে লাল আবিরই নিয়ে গিয়েছিলেন। ভুল ভাঙল একেবারে ফল বেরোনোর দিনে।

জনৈক আবির বিক্রেতার কথায়, ‘‘শেষে ভোট গণনার দিনে কী ভাবে যে ম্যানেজ দিয়েছিলাম।’’ এমনিতে এ রাজ্যে আবিরের বিশাল জোগান আসে বিহারের লখিসরাই থেকে। গত বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিন শেষ মুহূর্তে ট্যালকম পাউডারে কেমিক্যাল মিশিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছিল। তুমুল চাহিদায় জোড়াতালির সবুজ আবির ভিজে অবস্থাতেই দিতে বাধ্য হন কারবারিরা। তার পর থেকে সবুজ রঙের রমরমাই অটুট এ রাজ্যে ভোটের দৌ়ড়ে। তবু গত বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকেই টেনশন, ফের যদি গণেশ উল্টোয় তবে কী হবে!

Advertisement

সে বার প্রতি দশ বস্তায় আট বস্তাই লাল আবির রাখা হয়েছিল বড়বাজারে। এ বার প্রতি দশ বস্তার ন’বস্তাই সবুজ আবির। তবু সবুজ-শিবিরকে ‘হট ফেভারিট’ ধরেও আশঙ্কা ফিকে হচ্ছে কই? বড়বাজারের রুস্তম রায় স্ট্রিটে আবির কারবারিদের মহল্লায় ফিসফাস, যা সব ঘুষ-টুষের ছবি দেখানো হচ্ছে, তাতে যদি ফের সব পাল্টে যায়!

সবুজ বনাম লালের যুদ্ধ তাই আবিরের বাজারেও জমজমাট। পাইকারি আবির বিক্রেতা বাবুলাল মেনটের কথায়, ‘‘এ বার তো শুধু দোল নয়, ভোটের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। এখনই দূরে-দূরে জেলা থেকে আবিরের বরাত আসছে!’’ মানে দোলের সঙ্গে সঙ্গে ১৯ মে ভোটযুদ্ধের ফল ঘোষণার দিনের মোচ্ছবের প্রস্তুতিও সেরে রাখছেন তাঁরা।

এ রাজ্যের দীর্ঘ দিনের পরম্পরা মেনেই ফুটবল খেলায় মোহনবাগান জিতলে সবুজ আবির, আর ইস্টবেঙ্গল জিতলে লাল আবির খেলার চল। আর রাজনীতির মাঠে বামেরা লাল আবিরপন্থী। তথাকথিত দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস সবুজ আবিরই পছন্দ করে। কংগ্রেস ভেঙে জন্মানো তৃণমূলও সবুজ আবিরের পরম্পরাই বহন করছে। এ তল্লাটে কমলা আবির-বিলাসী বিজেপিকে এখনও ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না আবিরের বাজার। বিজেপি-র কমলা আবিরের চাহিদা তুলনায় কম। খেলা বা রাজনীতিতে কখন কারা ‘ফেভারিট’, সেটাই এই রাজ্যে সবুজ বা লাল আবিরের চাহিদা নির্ধারণ করে। বরাবরই।

ফুটবলেও এ বার আই লিগ স্পষ্টতই মোহনবাগানের দিকে ঢলে। আর ভোটের সমীক্ষায় এগিয়ে শাসক দল, তৃণমূল। কিন্তু ঘুষ-কাণ্ডের অভিযোগে তাদের কিছু ভোট কমতে পারে বলে সমীক্ষা আভাস দিয়েছে। জয়ের আশাতে সেই কাঁটাই এখন খচখচ করছে।

ব্যবসায়ী মহলে তাই জল্পনা, যদি সত্যিই অঘটন ঘটে তবে লাল আবিরের চাহিদা কী ভাবে ‘ম্যানেজ’ করা হবে। এবং এখানেই নড়াচাড়া করছে একটা হেঁয়ালি। জনৈক আবির ব্যবসায়ীর প্রশ্ন, কংগ্রেস-সিপিএম জোট জিতে গেলে কি দু’রকম আবির মেখেই উৎসব হবে, না কোনও একটা রং বেছে নেওয়া হবে? লাল না সবুজ, কোন আবির দিয়ে সমর্থকেরা তখন খেলবেন, তা নিয়ে কি নেতারা কোনও মিটিং করেছেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন