গ্রুপ ডি হয়ে রাঁধুনিগিরি করব কেন? প্রতিবাদ রাজ্য পুলিশে

নিচু তলার কর্মীদের প্রতি উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পুলিশেরই নিচু তলার কর্মীদের দিয়ে নিজেদের বাড়িতে পরিচারকের মতো কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে অনেক উচ্চপদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে। 

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share:

নিচু তলার কর্মীদের প্রতি উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পুলিশেরই নিচু তলার কর্মীদের দিয়ে নিজেদের বাড়িতে পরিচারকের মতো কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে অনেক উচ্চপদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এ বার গ্রুপ ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদে নিয়োগ করে রান্নার কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে রাজ্য পুলিশে। চাকরি খোয়ানো বা দূরে কোথাও বদলি হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাধারণত নিচু তলার কর্মীরা অভিযোগ জানান না। কিন্তু সেই ভয় কাটিয়ে উঠে সম্প্রতি বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী একসঙ্গে লিখিত ভাবে এই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছেন।

ওই পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, গ্রুপ ডি কর্মীর পদে চাকরি পাওয়ার সময় তাঁরা ভেবেছিলেন, অফিসে ফাইল দেওয়া-নেওয়া, নিদেনপক্ষে জল ভরে দেওয়ার কাজ পাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিভিন্ন পুলিশ ক্যাম্পে পাচকের কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘আমি তো রান্নার ‘র’-ও জানি না। তার উপরে একসঙ্গে এত লোকের রান্না! ক্যাম্পে গিয়ে তো অথৈ জলে পড়েছি। রান্নার কাজ অসম্মানের নয়। কিন্তু আমাদের গ্রুপ ডি কর্মীর পদে নিয়োগ করে কেন রান্নার কাজ করানো হবে?’’ ওই কর্মী জানান, তিনি শুনেছেন, পাচকদের জন্য নাকি সরকারের আলাদা পদ রয়েছে। এই ধরনের ‘কুক’ পদের অনেক কর্মী আছেন রাজ্যের পর্যটন দফতরে। সেই পদে বহাল হলে বেশি বেতন পাওয়া যায় বলেও শুনেছেন ওই পুলিশকর্মী।

Advertisement

অভিযোগ, পাচকের কাজ করানোর জন্য কখনও রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলায়, কখনও কখনও দূরবর্তী রাজ্যেও যেতে হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের কর্মীরা যখন ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তখন সেই দলে পাচক হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রুপ ডি পদে থাকা কর্মীকে। মাঝেমধ্যে পাচক হিসেবে পাঠানো হচ্ছে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলেও।

উচ্চপদস্থ অফিসারদের বাড়িতে কর্মরত নিচু তলার কর্মীরা তা হলে অভিযোগ জানাচ্ছেন না কেন?

আরও পড়ুন: সাধারণ ক্যাডারে এ বার পদ ৭ ধরনের

এক কর্মীর কথায়, ‘‘সাহেবদের বাড়িতে তো শুধু রান্না নয়, পরিচারক হিসেবে সব ধরনের কাজই করতে হয়। তবে সাহেবদের বাড়িতে কাজ করার সুবিধাও ভোগ করেন অনেকে। প্রথমত, মাসে নাকি ১৫ দিন ছুটি পাওয়া যায়। দু’জন কর্মী পালা করে কাজ করেন। দ্বিতীয়ত, সাহেবদের সঙ্গে সদ্ভাব থাকলে অন্যত্র প্রভাব খাটানো যায়।’’ সেই জন্য অনেকেই অভিযোগ করার রাস্তায় যান না।

তবে রাঁধিনির কাজ করানোর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের আট নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্টের কাছে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন ওই ব্যাটেলিয়নে কর্মরত কয়েক জন গ্রুপ ডি কর্মী। তাঁদের মধ্যে সরাসরি ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পাওয়া কর্মী আছেন, রয়েছেন বাবার মৃত্যুতে মানবিক কারণে চাকরি পাওয়া কর্মীও। অভিযোগ, ইন্টারভিউয়ের সময় ‘ইংরেজি জানেন?’, ‘কম্পিউটার চালাতে জানেন?’ গোছের প্রশ্ন করা হয়েছে। সেখানে স্নাতক পাশ করা কর্মীও রয়েছেন। অভিযোগ, তার পরেও তাঁদের দিয়ে রান্নার কাজ করানো হচ্ছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘গ্রুপ ডি-র কাজ করতে এসে কেন লোকের এঁটো বাসন ধুতে হবে?’’

ওই ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট অবধেশ পাঠক বলেন, ‘‘কোনও কাজই অসম্মানের নয়। তা ছাড়া সুইপার, ক্লিনার, কুক— সবই গ্রুপ ডি কাজের মধ্যেই পড়ে। মানবিক কারণে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, যাঁরা ইন্টারভিউ দিয়ে গ্রুপ ডি-র কাজ পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি দেওয়ার সময়েই বলে দেওয়া হয়, যে-কোনও ধরনের কাজ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন