চলন্ত এক্সপ্রেসে তোলাবাজি করতেন এই রেল পুলিশ!

তাঁর দায়িত্ব ছিল চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু রক্ষকের সেই ভূমিকাকে ঢাল করে তিনি আসলে ভক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ করছিলেন ট্রেনযাত্রীরা। সেই অভিযোগ পেয়ে মাঝপথে মিথিলা এক্সপ্রেসে উঠে রেল পুলিশের সেই কর্মীকে হাতেনাতে ধরেন রেলকর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

তাঁর দায়িত্ব ছিল চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু রক্ষকের সেই ভূমিকাকে ঢাল করে তিনি আসলে ভক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ করছিলেন ট্রেনযাত্রীরা। সেই অভিযোগ পেয়ে মাঝপথে মিথিলা এক্সপ্রেসে উঠে রেল পুলিশের সেই কর্মীকে হাতেনাতে ধরেন রেলকর্তারা।

Advertisement

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বারুইচন্দ্র পাল নামে ওই ব্যক্তি জিআরপি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের পদে রয়েছেন। যাত্রীদের কাছে থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে আপাতত লাইনে ‘ক্লোজ’ (দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বসিয়ে রাখা) করা হয়েছে। রেল পুলিশের এক ডিএসপি পুরো ঘটনার তদন্ত করে দেখছেন। তাঁর রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশকর্তারা।

দূরপাল্লার ট্রেনে রেলকর্মী থেকে পুলিশ-রক্ষীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ যাত্রীদের। অভিযোগের সেই তালিকায় আছে: l দুর্বৃত্তের মুখে পড়লে রেলরক্ষীদের দেখা মেলে না। l চুরি বা লুঠপাট হলে রেলেরই এক শ্রেণির কর্মী বিশেষ বিশেষ জায়গায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দুষ্কৃতীদের পালাতে সাহায্য করেন। l অনেক ক্ষেত্রে ট্রেনের কর্মীরাই ঘুমন্ত যাত্রীর টাকা ও মালপত্র হাতিয়ে পাচার করে দেন। l টাকা নিয়ে আসন জুটিয়ে দেন অনেক টিকিট পরীক্ষক ইত্যাদি। এ বার যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগে রেলরক্ষী ধরা পড়ায় আমযাত্রীর প্রশ্ন, খোদ রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকা নেয়, ট্রেন সফরে সুরক্ষার আর কী বাকি থাকল?

Advertisement

কী ঘটেছে মিথিলা এক্সপ্রেসে?

পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সোমবার হাওড়া থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পরেই রেল পুলিশের ওই এএসআই সাধারণ কামরায় ঢুকে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকেন। টাকা না-দিলে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। শ্রীরামপুর থেকে ওই ট্রেনে ওঠেন আনন্দ খান্দসা নামে এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকেও জোর করে ৬০ টাকা আদায় করেন ওই এএসআই। উপায়ান্তর না-দেখে তখনকার মতো টাকা দিলেও আনন্দবাবু পরে মোবাইল থেকে রেলের কন্ট্রোলে সব জানান। তত ক্ষণে ট্রেনটি বর্ধমানের কাছে পৌঁছে যাওয়ায় রেল পুলিশ বিষয়টি সেখানকার জিআরপি-কে জানায়। মিথিলা এক্সপ্রেস বর্ধমান স্টেশনে থামতেই রেল ও রেল পুলিশের এক দল কর্মী কামরায় উঠে অভিযুক্তকে আটক করেন। পরে জানা যায়, আটক ব্যক্তি যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়ার জিআরপি-র রক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে ওই ট্রেনে যাচ্ছিলেন।

আনন্দবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কামরার কোনও যাত্রীই বুঝতে পারেননি, লোকটি পুলিশকর্মী। প্রথমে মনে হয়েছিল, উনি টিকিট পরীক্ষক। বর্ধমানে রেল পুলিশ কামরায় ওঠার পরে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।’’

ওই ভক্ষক রক্ষীকে হাতেনাতে ধরার জন্য যোগাযোগের আধুনিক ব্যবস্থাকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে। চলন্ত ট্রেনে কোনও সমস্যা হলে এত দিন যাত্রীদের অভিযোগ করার তেমন কোনও জায়গাই ছিল না। জিআরপি থানাও নেই সব স্টেশনে। তবে সুরেশ প্রভু রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। তাঁর নির্দেশে রেলকর্তারা নিয়মিত সোশ্যাল নেটওয়ার্কে হাজির থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এবং সেই সূত্রেই যাত্রীদের নানান অভাব-অভিযোগ টের পাচ্ছেন। নানা ধরনের মোবাইল অ্যাপ চালু হওয়ায় যাত্রীরা এখন সহজেই দ্রুত নিজেদের অভিযোগ যথাস্থানে জানাতে পারছেন। এক রেলকর্তার কথায়, যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, রেল বোর্ডের নির্দেশে সেটাও এখন দ্রুত জানিয়ে দিতে হচ্ছে ওই সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাধ্য হয়েই যাত্রীদের অভিযোগ আসা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে তার যথাসাধ্য নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে রেল-কর্তৃপক্ষকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন