সভায় চড়ের অভিযোগ

বাড়ছে কোন্দল, ঘর সামলাতে বেসামাল গুরুঙ্গ

বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দুই বিধায়ক দল ছাড়তেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে কোন্দল ক্রমশ বাড়ছে। মোর্চার একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে গুরুঙ্গ-অনুগামী তথা কট্টরপন্থীদের সঙ্গে নরমপন্থীদের বচসা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছে বলেও দল সূত্রেই জানা গিয়েছে। এর মধ্যেই সোমবার শীর্ষ স্তরের এক নেতা মেজাজ হারিয়ে তাঁর দীর্ঘ দিনের এক সতীর্থকে চড় মেরেছেন বলেও মোর্চার অন্দরে অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দুই বিধায়ক দল ছাড়তেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে কোন্দল ক্রমশ বাড়ছে। মোর্চার একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে গুরুঙ্গ-অনুগামী তথা কট্টরপন্থীদের সঙ্গে নরমপন্থীদের বচসা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছে বলেও দল সূত্রেই জানা গিয়েছে। এর মধ্যেই সোমবার শীর্ষ স্তরের এক নেতা মেজাজ হারিয়ে তাঁর দীর্ঘ দিনের এক সতীর্থকে চড় মেরেছেন বলেও মোর্চার অন্দরে অভিযোগ রয়েছে।
মোর্চা সূত্রে খবর, দলের বিক্ষুব্ধরা তলে তলে নয়া মঞ্চ গড়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে, গুরুঙ্গ শিবিরের অনেকেরই রাতের ঘুম উবে গিয়েছে বলে দল সূত্রের খবর। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা জিটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধান এবং সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে বলেছেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে পারি, দলের সভাপতির নজরে সবই রয়েছে। আশা করি, তিনি সব সামলে নেবেন।’’
এই অবস্থায়, আজ, বুধবার কালিম্পঙে মোর্চার যুব সংগঠনের প্রকাশ্য সমাবেশ। কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী ও দার্জিলিঙের বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ান গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দল ছাড়ার পরে মোর্চার এটাই প্রথম জনসভা। তাতে অন্যতম বক্তা গুরুঙ্গই। তাঁর বিরুদ্ধে ‘উদ্ধত ও অপমানজনক আচরণ’ ও নানা ‘আর্থিক দুর্নীতি’র যে অভিযোগ উঠেছে, তার মোকাবিলায় গুরুঙ্গ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান, তা দেখেই পদক্ষেপ করতে চান বিক্ষুব্ধদের অনেকে।
মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে, দুই বিধায়ক দল ছাড়ার পরে মোর্চার বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের অনেকেই ‘হেনস্থা-অপমান-বঞ্চনা’র জবাব দিতে আসরে নেমেছেন। যাঁদের কেউ গুরুঙ্গের কাছে অপমানিত হয়েছেন বলে অনুগামীদের কাছে দুঃখ করেছেন। কয়েকজনের আক্ষেপ, তাঁরা দুর্দিনে দলের জন্য মার খেলেও জিটিএ গঠনের পরে পছন্দসই পদ বা কাজ পাননি। আবার কয়েকজন নেতার খেদ, জিটিএ গঠনের পরে তাঁদের আড়ালে রেখে দেওয়া হয়েছিল। যেমন মোর্চার অন্দরে প্রদীপ প্রধানের অনুগামীদের অনেককে আক্ষেপ করতে দেখা যায়। তাঁদের অভিযোগ, প্রদীপবাবু গোড়া থেকে দল সামলে রাখলেও জিটিএ গঠনের পরে কার্শিয়াঙের নেতা অনিত থাপাকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমনকী, গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের পরে তাঁর অবর্তমানে কে জিটিএ চিফ হবেন, সেই আলোচনাতেও প্রদীপবাবুর পরিবর্তে অনিতবাবুর নাম পেশ করেছিলেন গুরুঙ্গ অনুগামীরা। তা দলের সকলে মানেননি। কিন্তু, প্রদীপবাবুর ঘনিষ্ঠদের ক্ষোভ তাতে কমেনি।

Advertisement

রোশন গিরির কয়েকজন অনুগামীও দীর্ঘদিন ধরে দলের নানা স্তরে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, জিটিএ গঠনের পরে বিনয় তামাঙ্গকে সামনের সারিতে এনে রোশনকে অনেকটা আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত সোমবার শিলিগুড়িতে মহকুমা পরিষদ ভোটের প্রচার সেরে গুরুঙ্গ ও রোশন, দু’জনেরই অগম সিংহ নগরে দলের এক নেতার বাড়িতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রোশন বার হয়ে হনহন করে হেঁটে গাড়িতে উঠে সুকনায় ব্লক স্তরের এক নেতার বাড়িতে চলে যান। ফলে, মোর্চার কোন্দল নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে পৌঁছেছে।

পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে তৃণমূলও। তবে হরকাবাহাদুর ছেত্রী এবং ত্রিলোক দেওয়ান তৃণমূলে যোগ না দিয়ে পৃথক মঞ্চ গড়ার কথাই আপাতত ভাবছেন। সে ক্ষেত্রে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি ‘হৃদয়’-এ রেখেও তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকারে সামিল হতে বাধা থাকবে না কালিম্পঙের বিধায়কের। এ দিন হরকাবাহাদুর অবশ্য শুধু বলেন, ‘‘সময়ই সব বলবে।’’

Advertisement

এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে মোর্চা। মঙ্গলবার কালিম্পঙে সাংবাদিক বৈঠক করে মোর্চা জানিয়েছে, জিটিএ-র পূর্ণক্ষমতা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মোর্চার বক্তব্য, স্বাধীনভাবে জিটিএকে কাজ করতে দেওয়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো এটাই তাদের শেষ চিঠি। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১১ সালে জিটিএ গঠনের পর থেকে ৫৯টি দফতর হস্তান্তরের কথা থাকলেও, তা করা হয়নি। লেপচা, তামাঙ্গ, ভুটিয়া এবং মঙ্গরদের জন্য বোর্ড গঠন করে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন ছড়ানো হচ্ছে বলেও গুরুঙ্গ চিঠিতে অভিযোগ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন