দমকা ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেল প্রভাতকে

হাওয়ার ধাক্কায় তখন ভাসছেন প্রভাত। বার দু’য়েক পাল্টি খেয়ে পড়লেন হাত বারো দূরে। ঝামা ইটের রাস্তায় পড়ে হাত-পা কেটেকুটে একশা। শনিবার দুপুরে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে বছর তিরিশের প্রভাত মিত্রের। থাকেন গাইঘাটার ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের কাহনকিয়া গ্রামে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবিবারও আতঙ্ক চোখে মুখে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

মাটির বাড়ির দফারফা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হাওয়ার ধাক্কায় তখন ভাসছেন প্রভাত।

Advertisement

বার দু’য়েক পাল্টি খেয়ে পড়লেন হাত বারো দূরে। ঝামা ইটের রাস্তায় পড়ে হাত-পা কেটেকুটে একশা।

শনিবার দুপুরে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে বছর তিরিশের প্রভাত মিত্রের। থাকেন গাইঘাটার ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের কাহনকিয়া গ্রামে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবিবারও আতঙ্ক চোখে মুখে।

Advertisement

প্রভাতের কথায়, ‘‘হাওয়ার টানে ঘুরে গিয়ে উড়ে গেলাম। কিচ্ছু করতে পারলাম না। কোনও জোরই খাটল না। হাতে আবার কোদাল ছিল। ভাগ্যিস তার উপরে গিয়ে মুখটা পড়েনি!’’

শনিবার দুপুরে এমনই ঝ়ড়ের তাণ্ডবের সাক্ষী থেকেছে গাইঘাটার বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। বহু বাড়ি ভেঙেছে। গাছ উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছে।

অতীতেও ঝড়ের তাণ্ডবের সাক্ষী থেকেছে গাইঘাটা। ১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিল টর্নেডো তছনছ করে দিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। এক বৃদ্ধাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল গাছের উপরে। গোড়া থেকে উপড়ে গিয়েছিল বাঁশঝাড়। পানীয় জলের কলের পাইপ পেঁচিয়ে তুলে ফেলেছিল মাটি থেকে। বহু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। মাত্র তিরিশ সেকেন্ডের সেই অভিজ্ঞতার কথা এখনও ভোলেননি এলাকার প্রবীণেরা।

শনিবারের ঘটনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন প্রভাত। খেতে কাজ করতে করতে আকাশের লক্ষণ ভাল নয়, বিলক্ষণ বুঝেছিলেন প্রভাত ও তাঁর সঙ্গী তাপস দত্ত। বাড়ির দিকে পা চালিয়েছিলেন দ্রুত। কিন্তু ঝড় ততক্ষণে গতি বাড়িয়ে গিলে খেতে আসছে। বিপদ আশঙ্কা করে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েন দু’জন। মিনিট খানেকের মধ্যেই ঝড়ের গতি কমে আসায় দু’জন ফের পা চালান। কিন্তু কোথা থেকে আরও একটা দমকা বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় প্রভাতবাবুকে। তাঁর সঙ্গী অবশ্য অক্ষতই আছেন। চারিদিকে তখন শোঁ শোঁ শব্দ। গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে চৈত্রের বিকেল। হামাগুড়ি দিয়ে উঠে বসেছিলেন প্রভাত। ঝড় অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায়। এ বার শুরু হল শিলাবৃষ্টি। বাড়ি ফিরে তাপসবাবু দেখেন, তাঁদের জমির দু’টি বড় গাছ উপড়ে গিয়েছে।

রবিবার কাহনকিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে ধ্বংসের ছবি। কোথাও ঘরের ছাউনির টিন বহু দূরে বাঁশ বাগানে উড়িয়ে নিয়ে ফেলেছে। পোলট্রি ভেঙে তছনছ। বহু বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। গ্রামবাসীরা জানালেন, শনিবার সন্ধ্যায় দু’দফায় দমকা ঝড় বয়ে গিয়েছে গ্রামের উপর দিয়ে। সঙ্গে ছিল প্রবল শিলাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে ঝড়ের তীব্রতা ছিল মিনিট সাতেক। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘ঝড়টা এল চাঁদপাড়ার দিক থেকে। গ্রামের উপর দিয়ে সব লণ্ডভণ্ড করে বাংলাদেশের দিকে চলে গেল হাওয়ার ঝাপটা।’’

গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী শীল বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বারান্দায় ছিলাম। ঝড় শুরু হতেই ঘরে ঢুকি। এমন সময়ে উপর থেকে টালি ভেঙে মাথায় পড়ল। তবে খুব বেশি লাগেনি। ঘরে তিনটি ছাগল ছিল। একটা ছাগল চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। বাকি দু’টোকে দেওয়ালের বেড়া ভেঙে বাইরে বের করে দিই বললে বেঁচে গিয়েছে।’’ ঝর্না মণ্ডলদের পোলট্রি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। লক্ষ্মী মণ্ডল নামে আর এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘ঝড় শুরু হতেই গোয়াল ভেঙে যায়। গরুটা চাপা পড়ে ছটফট করছিল। অনেক কষ্টে তাকে বাঁচিয়েছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস জানালেন, ঝড়ের সময়ে গোটা গ্রামে কান্নার রোল উঠেছিল। বেশ কয়েকটা গরু-ছাগল মারা গিয়েছে। ঝড় থামতেই গ্রামবাসীরা উদ্ধারের কাজ শুরু করেন নিজেরাই। অঞ্জলি মণ্ডল নামে এক মহিলা মাথায় চোট পেয়েছেন। প্রাণে বাঁচতে লিপিকা মিত্র খাটের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

কাহনকিয়া গ্রামের পাশাপাশি স্থানীয় সুটিয়া ডুমা জলেশ্বর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকাতেও ঘরবাড়ি ভেঙেছে। নির্বাচনের আগে ওই ঘটনায় রাজনৈতিক দলের লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে ছুটে গিয়েছেন। গাইঘাটার বিডিও বিরাজকৃষ্ণ পাল কয়েকটি গ্রামে গিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ত্রাণ বিলি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন