এক সময় মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে ফুটবলকে বেছে নিয়েছিল পুলিশ। পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে ভলিবল, বাস্কেটবলকে সামনে রেখে নতুন প্রজন্মের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টাতেও সাফল্য মিলেছে। তাই এ বার পৃথক রাজ্যের দাবিতে মাঝেমধ্যেই তেতে ওঠা কোচবিহারের যুব সমাজের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে পুলিশের হাতিয়ার হা ডু ডু।
সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে আজ, রবিবার সকাল থেকে জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে ‘কোচবিহার স্পোর্টস’। তাতে মূল খেলা কবাডি, যা কি না উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় হা ডু ডু বলেই বেশি পরিচিত। সঙ্গে থাকবে ফুটবল, ভলি, কুস্তিও। জেলার ৮৯৫টি ক্লাব প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে। নাম লিখিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগী। আর্থিক পুরস্কার, ব্যক্তিগত পদক ছাড়াও চূড়ান্ত সফল মেয়েদের স্কুটি ও ছেলেদের বাইক দেওয়া হবে। সব ঠিক থাকলে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার পর পুরস্কার বিলির মঞ্চে হাজির থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের এডিজি এন রমেশবাবু বলেন, ‘‘কোচবিহার স্পোর্টসকে ঘিরে গোটা জেলায় উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।’’
ঘটনা হল, কোচবিহারের তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে আগেই আসরে নেমেছে বিজেপি। সে জন্য গ্রেটার কোচবিহারের দাবিদার সংগঠনের সঙ্গে তারা নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে কোচবিহারে ‘নারায়ণী সেনা’র কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি নেয় পৃথক রাজ্যের দাবিদার একটি সংগঠন। রাজ্যের আপত্তিতে তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তার পরেও আলাদা রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে, ‘নারায়ণী সেনা’য় নাম লেখালে ভারতীয় সেনায় যোগদানের সুযোগ তৈরি হতে পারে জানিয়ে তলে তলে প্রচার চলছেই।
একদা ভুটানে ঘাঁটি গেড়েই অসমের আলফা জঙ্গিরা আলাদা কামতাপুরের দাবিদার কেএলওকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। সে যাত্রায় সেনা অভিযানের পরে বহু জঙ্গির আত্মসমর্পণের পরেও কেএলও গোপনে যুবসমাজকে কাছে টানতে মরিয়া।
সামগ্রিক এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই কোচবিহার জেলার সব ক্লাব নিয়ে নানা খেলার আয়োজনের উদ্যোগ। পুলিশের উত্তরবঙ্গের কর্তারা খোঁজখবর নিয়ে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হা ডু ডু-কে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখেন। কোচবিহারের বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ে শ্রদ্ধেয় এক প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘‘চমৎকার পদক্ষেপ। আমরা ছোট থেকে হা ডু ডু, দাঁড়িয়া-বান্ধার মতো খেলাই খেলেছি। রাজ্য সেটাকে উৎসাহ দিলে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানার সুযোগ তৈরি হবে।’’ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বংশীবদন বর্মনও। তবে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অনন্ত রায় (মহারাজ) ওন শিবিরের নেতা গৌতম সিংহ রায় এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কোচবিহার জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা প্রশান্ত বর্মন বলেন, ‘‘এতে জেলা থেকে খেলোয়াড়রা উঠে আসার সুযোগ পাবে।”