State News

বৈষম্য মুছতে সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত আদিবাসী ছাত্রী

জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে, লিঙ্গবৈষম্য ভুলে অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক বা শিক্ষিকার হাতে ছিল স্কুলের পুজোর দায়িত্ব।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

হবিবপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০৬
Share:

রোহিলা হেমব্রম

বাগ্‌দেবীর আরাধনায় বৈষম্যের বেড়া ভাঙার বার্তা। কয়েক বছর ধরে এমনই নজির রাখছে বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা হবিবপুরের প্রতন্ত গ্রামের স্কুল।

Advertisement

জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে, লিঙ্গবৈষম্য ভুলে অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক বা শিক্ষিকার হাতে ছিল স্কুলের পুজোর দায়িত্ব। দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে এ বার সেই দায়িত্ব পেল আদিবাসী ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণির রোহিলাকে পুজোয় সাহায্য করবেন অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস। স্কুলের মাঠে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে বসে জাতপাতের বিভেদ ও লিঙ্গবৈষম্য রুখতে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয় তাঁর সেই কথাবার্তার ভিডিয়ো।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোটার কার্ডে স্বামীর নাম ‘হসপিটাল’, আতঙ্কে উনজিলা

মালদহের হবিবপুর ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম দাল্লা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত আদিবাসী, রাজবংশী এবং নমঃশূদ্র প্রধান ওই গ্রাম। সেখানেই ১৯৬৪ সালে তৈরি হয়েছিল দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুল। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মালদহে হাতেগোনা দু’-একটি স্কুলের তালিকায় ছিল দাল্লার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও। শুধু তাই নয়, নিজেদের বিয়ে নিজেরাই রুখে ওই স্কুলের অনেক ছাত্রী কন্যাশ্রী দিবসে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের তরফে সম্মানিতও হয়।

সেই স্কুলেই এ বার সরস্বতী পুজোয় বিভেদ মোছার বার্তা আরও জোরালো। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সেখানে সরস্বতী পুজো করেছিলেন অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক রতন শিকদার। তাঁকে সাহায্য করেন সহকর্মী দ্বীপ্তার্ক সাহা, পুষ্পেন্দু মিশ্র এবং প্রধান শিক্ষক। এ বারের জন্য রোহিলা ও বিনয়কে মন্ত্রোচ্চারণ ও পুজো-পদ্ধতি শেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

রোহিলা বলছে, ‘‘স্কুলে পুজোর গুরুদায়িত্ব পেয়েছি। সাধ্যমতো তা পালন করব। আদিবাসী পরিবারের মেয়ে। কোনও দিন পুজো করিনি। আগে যে শিক্ষকেরা পুজো করেছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে তা-ই সব কিছু শেখার চেষ্টা করছি।’’

স্কুলের শিক্ষক বিনয় বলেন, ‘‘কে ব্রাহ্মণ, কে অ-ব্রাহ্মণ তা বড় নয়— সেই বার্তা দিতে আমি ও রোহিলা পুজো করব।’’ প্রধান শিক্ষক জয়দেব বলেন, ‘‘স্কুলে বাগ্‌দেবীর আরাধনা সকলে মিলে করি। এখানে ভেদাভেদ রাখতে চাই না। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বৈষম্য ভুলিয়ে এই পুজো মিলনমেলার রূপ নিক, সেটা-ই আমাদের আশা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন