Jadavpur University

যাদবপুরে বৈঠকে ঘেরাওয়ের জুজু?

পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি, ফলপ্রকাশে দেরি, ভর্তিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ৯ ডিসেম্বর রাত প্রায় ২টো পর্যন্ত দুই সহ-উপাচার্য এবং বিভাগীয় ডিনকে ঘেরাও করে রাখে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সংসদ (ফেটসু)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১২
Share:

—ফাইল চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সপ্তাহে দু’বার ঘেরাও। কেন? অনলাইনে তিন দফা কাউন্সেলিং সত্ত্বেও এ বার যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪৮৭টি আসন ফাঁকা থেকে গিয়েছে। কেন?

Advertisement

আপাতদৃষ্টিতে এই দু’টি ঘটনা ও প্রশ্নের মধ্যে সম্পর্ক সন্ধান সহজ নয়। কিন্তু শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, যাদবপুরের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির বিষয়টি মাথায় রাখলে সেই সম্পর্কের খোঁজ পাওয়া খুব কঠিনও নয়। যাদবপুরের ঘেরাও সংস্কৃতি নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন উঠেছে, উঠছে। এ বারেও বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের পাশাপাশি বেরিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের ক্ষোভও। শিক্ষক সমিতি (জুটা) উপাচার্যকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, তারা আর ‘জুমস’ সংক্রান্ত কমিটির মুখোমুখি বৈঠক চায় না। বৈঠক হোক অনলাইনে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘‘জুটা-র চিঠি পেয়েছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জুমস কমিটির বুধবারের বৈঠক, ওই কমিটির অন্য সব বৈঠকই হবে অনলাইনে।’’

পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি, ফলপ্রকাশে দেরি, ভর্তিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ৯ ডিসেম্বর রাত প্রায় ২টো পর্যন্ত দুই সহ-উপাচার্য এবং বিভাগীয় ডিনকে ঘেরাও করে রাখে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সংসদ (ফেটসু)। কমিটি গড়ে ভর্তি ও পরীক্ষার পদ্ধতি এবং ফলপ্রকাশের অনলাইন প্রক্রিয়া (জুমস) ঢেলে সাজানোর আশ্বাস দেওয়ার পরে ঘেরাও ওঠে। তিনটি ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি-সহ নবগঠিত কমিটির বৈঠক বসে ১১ ডিসেম্বর। ফেটসু সেখানেও সহ-উপাচার্য, ডিন-সহ কিছু কর্তাকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখে। জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের প্রশ্ন, ‘‘করোনা আবহে একটি ঘরে এ ভাবে ঘেরাও করা যায় কি? ওই পড়ুয়ারা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নষ্ট করছে।’’

Advertisement

ফেটসু-র চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদার বলেন, ‘‘জুটা যা বলেছে, তা বলতেই পারে। আমরা মনে করছি, ফলাফল সংক্রান্ত দাবি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফলের প্রক্রিয়া যখন বিধ্বস্ত হচ্ছিল, তখন জুটা যদি ঠিক কথাটি জোরের সঙ্গে বলত, তা হলে এখন হয়তো এই কথাগুলো তাদের বলতে হত না।’’ অরিত্র জানান, তাঁরা এ-পর্যন্ত জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়েই বৈঠক হবে। এর বাইরে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। অতিমারির মধ্যেও শিক্ষকদের নিজেদের অবস্থান ফের ভেবে দেখতে অনুরোধ করেন তিনি।

বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, ঘেরাও-আন্দোলনের জেরে যাদবপুরের ভাবমূর্তি এত অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে যে, অনেকেই এখানে পড়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন। কলা, বিজ্ঞানেও অনেকে ভর্তি হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এ বার ৪৮৭টি আসন ফাঁকা। সাম্প্রতিক কালে এত আসন শূন্য থাকার নজির নেই। ২০১৯ সালে ২৬১টি আসন ফাঁকা ছিল। ২০১৮-য় ২৫৩টি। এ বার বেশি আসন খালি কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যালে। শিক্ষা শিবিরের অনেকের বক্তব্য, হয়তো যাদবপুরের সাম্প্রতিক ভাবমূর্তিই অনেক পড়ুয়াকে বিমুখ করে তুলছে।

সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, এ বার রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কাউন্সেলিংয়ের পরে ভর্তি শুরু হয় আইআইটি, এনআইটি-তে। ফলে জয়েন্টের মেধা-তালিকায় উপর দিকে থাকা অনেকেই যাদবপুরে আবেদন করেও পরে আইআইটি বা এনআইটি-তে চলে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন