Omicron

Omicron: ছড়িয়েছে কি ওমিক্রন? প্রশ্ন চিকিৎসক মহলে

কলকাতার ৩টি বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশ থেকে আসা তিন জন এবং সরকারি হাসপাতালে ওই যুবক-সহ মোট চার জন ওমিক্রন আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৭
Share:

করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রনের আতঙ্কের মধ্যেই বড়দিনে জনস্রোত পার্ক স্ট্রিটে। শিকেয় দূরত্ব-বিধি। মাস্কও পরেননি অনেকে ছবি বিশ্বনাথ বণিক

অজানতেই কি এ রাজ্যের জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়েছে ওমিক্রন? কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের এক পড়ুয়ার শরীরে করোনার ওই নতুন প্রজাতির সন্ধান মেলার পরে, এমনই সন্দেহ প্রকাশ করছেন চিকিৎসক মহল। শুক্রবার রাতে জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট আসার পরেই ওই যুবককে কৃষ্ণনগর থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। ওমিক্রন ধরা পরেছে শুনে প্রথমে তাঁর রক্তচাপ বেড়ে গেলেও, এখন তা স্থিতিশীল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তেমন কোনও উপসর্গ নেই যুবকের।

আইডি হাসপাতালে ওই রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা বক্ষ-রোগ চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই যুবক জানিয়েছেন, দেশে বা বিদেশে কোথাও ভ্রমণ করেননি। তিনি যেখানে পড়াশোনা করেন সেখানেই হস্টেলে থাকতেন। মাঝেমধ্যে কৃষ্ণনগরে বাড়ি যেতেন। এটা থেকেই স্পষ্ট যে, বিদেশ ভ্রমণের যোগ না থাকলেও ওমিক্রন আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।’’

Advertisement

শনিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ওই পড়ুয়া-চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা পরিবারের তিন জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, তাতে এক জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। ওমিক্রন জনগোষ্ঠীতে ছড়ানোর সন্দেহে অজয়বাবু বলেন, ‘‘ওই যুবক যেহেতু চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত তাই তিনি কিছু রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন। তবে নিশ্চিত না-হয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে তিনি কী ভাবে ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেন তার সূত্র খোঁজা হচ্ছে।’’

সামান্য জ্বর-সহ অন্যান্য মৃদু উপসর্গ থাকায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে ছিলেন ওই চিকিৎসক-পড়ুয়া। পজ়িটিভ আসায় ২২ ডিসেম্বর রাতে তিনি কৃষ্ণনগরের বাড়িতে চলে যান। কলকাতা পুর এলাকায় পজ়িটিভ আসা সমস্ত নমুনাই জিনোম সিকোয়েন্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো ওই যুবকের নমুনাও পরীক্ষায় ওমিক্রন ধরা পরে। তিনি যে হস্টেলে থাকতেন সেখানকার আবাসিকদের বেরোতে বারণ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এ দিন পর্যন্ত কলকাতার ৩টি বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশ থেকে আসা তিন জন এবং সরকারি হাসপাতালে ওই যুবক-সহ মোট চার জন ওমিক্রন আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদেশযাত্রার যোগ না-থাকা সত্ত্বেও ওমিক্রন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক বলেই মত চিকিৎসকদের। কারণ, ডেল্টা প্রজাতির থেকে পাঁচ গুণ বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে ওমিক্রনের। করোনার ওই নতুন ভেরিয়েন্ট কতটা ছড়াবে কিংবা কতটা ভয়াবহ হবে তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি জেলাকে নিজেদের চিকিৎসা পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।

‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’ (আইআইসিবি)-র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরে করোনা আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন প্রয়োজন তেমন ভাবে হয়নি। কিন্তু খুব সাম্প্রতিক কালে পরিচিত কয়েক জনের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া সত্ত্বেও বেশ গুরুতর অসুস্থতা দেখেছি। সেগুলি ওমিক্রন কি না, সেটা বোঝার উপায় ছিল না। কারণ, রাজ্যে সে ভাবে তখনও জিনোম সিকোয়েন্স হয়নি এবং স্পাইক জিনের আরটি-পিসিআর-ও হচ্ছিল না।’’ তাঁর মতে, আগামী ১৫ দিন যদি দ্রুত গতিতে কয়েকশো জিনোম সিকোয়েন্স করতে পারলে বিষয়টা অনেক স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে এস জিনের অনুপস্থিতির বিষয়টাও স্বাস্থ্য দফতর পরীক্ষা শুরু করেছে, তাতে ওমিক্রনের সম্ভবনা সম্পর্কেও একটা ধারণা মিলবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই যে ভয়টা ছিল, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে ও মহানগরে ওমিক্রন ছড়িয়ে পরেছে কি না, সেই বিষয়টিতে আর একটু নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল। বিদেশ যাত্রার যোগ না থাকলেও ওমিক্রন মিললে বুঝতে হবে এবার তা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে। তাই এই সময় সেটিকে আটকাতে না পারলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মত পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’ তাঁর মতে, বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সড়ক-রেল কিংবা জলপথেও অনেকে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরছেন সেই সব ক্ষেত্রেও কিন্তু কড়া নজরদারির প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement