পড়াশোনার পরিবেশ ফেরাতে নির্দেশ হাইকোর্টের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরা জরুরি বলেও জানিয়েছে আদালত। বুধবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরা জরুরি বলেও জানিয়েছে আদালত। বুধবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না। তবে নতুন করে জটিলতা এড়াতে আজ, বৃহস্পতিবারের লালবাজার অভিযান বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ করার আগে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিতে চান তাঁরা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিমলশঙ্কর নন্দ নামে এক শিক্ষক এবং আরও কয়েক জন জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছিলেন হাইকোর্টে। এ দিন প্রধান বিচারপতির এজলাসে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। এ দিন শুনানির শেষে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম কিংবা পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট করা চলবে না।

Advertisement

চার দিন আগে, গত শনিবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও প্রায় একই পরামর্শ দিয়েছিলেন যাদবপুরের পড়ুয়াদের। ওই দিন মিছিলের পর তাঁদের বক্তব্য জানাতে আচার্য-রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পড়ুয়াদের কথা শোনেন রাজ্যপাল। আশ্বাস দেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে মতামত জানাবেন। কিন্তু সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন আচার্য। তার পরেও ক্লাস বয়কট চালিয়ে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এ দিন আদালতের নির্দেশ জানার পরেও ছাত্রছাত্রীরা সেই অনড় অবস্থানই বজায় রেখেছেন।

ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে পুলিশ ডাকতে পারেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে ঢোকার জন্য যে গেটগুলি তাঁরা খোলা রাখতে চাইবেন, পুলিশ মোতায়েন থাকবে তার বাইরে। দুই বিচারপতি বলেছেন, কোনও অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যেখানে-সেখানে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে পারেন না। বিক্ষোভ দেখাতে গেলে চত্বরের বাইরে বা ক্যাম্পাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গায় তা করতে হবে।

শুনানির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন, “আচার্য রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ছাত্রদের বিক্ষোভ অব্যাহত।” সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২৮ অগস্ট যে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু অভিযুক্ত হিসেবে তিনি যে ছাত্রের নাম করেছেন, ওই নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্র নেই।” কল্যাণবাবু আরও জানান, পুলিশ এ পর্যন্ত ন’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাতে কিছু নাম পাওয়া গিয়েছে। সেই নামগুলি খতিয়ে দেখে তদন্ত এগোচ্ছে। তদন্ত চলাকালীন কিছু ছাত্র যাদবপুর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন। লেক থানার পুলিশ সেই ঘটনার তদন্ত করছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে যা ঘটেছে, আদালতের কাছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কল্যাণবাবু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জানান, মঙ্গলবার ছুটি ছিল। তাই বুধবার হলফনামা পেশ করে বক্তব্য জানানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকাতে হবে। বিক্ষোভ চললে ক্লাস হবে না।” বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি বসানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। জানতে চাওয়া হয়, সব ছাত্রছাত্রীর পরিচয়পত্র রয়েছে কি না। জয়দীপবাবু জানান, ১১ হাজার ৫০০ জন পড়ুয়ার সকলেরই পরিচয়পত্র আছে। প্রয়োজনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য কোনও জায়গাও নির্দিষ্ট করা হতে পারে।

বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় তখন প্রশ্ন করেন, এখন এ সব কথা আদালতকে বলছেন কেন? আগের দিনই তো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ঠিক করবেন ক্যাম্পাসের মধ্যে কী হবে। জয়দীপবাবু বলেন, “আদালত নির্দেশ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিক করতে সুবিধা হয়।” প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনারা অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধা চাইছেন। আদালত সেটা বিবেচনা করে দেখবে।” তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকুক, পড়াশোনা হোক সেটাই সকলের কাম্য। প্রধান বিচারপতির কথায়, “কে দোষী, কে দোষী নয় সেটার বিচার এই আদালত করবে না। আদালত পরিস্থিতির উন্নতিতে সাহায্য করবে।” ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পরিস্থিতি নেই। কোনও ছাত্রছাত্রীই ক্লাস করতে চাইছেন না। প্রধান বিচারপতি তখন মন্তব্য করেন, যাঁরা ক্লাস করতে চাইছেন না, তাঁরা না-ই করতে পারেন। কিন্তু ক্লাস খোলা রাখতে দিতে হবে।

বিকেলের মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যায়। তা নিয়ে সন্ধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ সভায় আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, পরবর্তী পদক্ষেপ করতে আইনজ্ঞের পরামর্শ নেবেন তাঁরা। তবে ক্লাস বয়কট চলবে। আদালতের নির্দেশকে ‘ন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এর আগে এ দিন দুপুর ছাত্রছাত্রীদের আহ্বানে এক নাগরিক কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা। ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার, অশোক বিশ্বনাথন, নাট্যকর্মী কৌশিক সেন, চন্দন সেন, সঙ্গীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক-সহ অনেকে। যাদবপুরের প্রাক্তনী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেকে ছিলেন। ছাত্রছাত্রীরা জানান, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বিনায়ক সেনের স্ত্রী ইলিনা সেন ও তথ্যচিত্র পরিচালক আনন্দ পট্টবর্ধন। এই মঞ্চ থেকেই প্রশ্ন ওঠে, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন এবং ছাত্র আন্দোলনে রাশ টানার উদ্দেশ্যেই কি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনামাফিক গোটা ঘটনা ঘটিয়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে নাগরিকদের সংগঠন ‘সিটিজেন্স ফর জাস্টিস’-এর এক প্রতিনিধিদল। ওই দলের তরফে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় পরে বলেন, “যাদবপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন রাজ্যকে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করার পরামর্শ দেন।” বৃহস্পতিবার বিশ্ব প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছেন পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন