পড়ুয়ারা ঠিক মতো না শিখলে জবাব দিতে হবে প্রধান শিক্ষককে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পৃথিবীর গতি সম্পর্কে অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়ার উত্তর শুনে কার্যত মাথা ঘুরে গিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের। বৃত্তের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ‘গোল গোল জিনিস’ বলেই হাল ছেড়ে দিয়েছিল নবম শ্রেণির পড়ুয়া। শুধু তা-ই নয়, গণিত ও ইংরেজির প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও অনেক পড়ুয়ার মধ্যে দেখা যায়নি।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন জেলায় সরকার-পোষিত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে পরিদর্শনে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে পরিদর্শকদের। তাই এ বার আর শুধু আলাপ-আলোচনা নয়, পড়ুয়াদের না জানার দায় নিতে হবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদেরও। বেশ কয়েকটি জেলা এ বিষয়ে কড়া হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর।

কলকাতা ও তার লাগোয়া কয়েকটি জেলার কিছু স্কুল পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কেন স্কুলগুলির এই অবস্থা, তার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বারবার স্কুল পরিদর্শনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। তার পরে মন্ত্রীর নির্দেশে স্কুল পরিদর্শনে জোর দেয় স্কুলশিক্ষা দফতরও। সচিব থেকে শুরু করে স্কুলশিক্ষা দফতর ও কমিশনারেটের কর্তারাও স্কুল পরিদর্শন শুরু করেন। আর তখনই জানা যায় পড়ুয়াদের একাংশের এই অবস্থার কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়ার পৃথিবীর গতি সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বৃত্ত মানে বোঝে ‘গোল গোল জিনিস।’ একাদশ শ্রেণিতে সংস্কৃতের সামান্য জ্ঞানও নেই কোনও কোনও পড়ুয়ার। বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ সম্পর্কে বহু পড়ুয়ার জ্ঞান বেশ সীমিত। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইছে বিভিন্ন জেলা।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা স্কুল পরিদর্শক নজরুল হক সিপাই জানান, যে সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা সামান্য প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি, সেই স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিদর্শন শেষ হলে চিহ্নিত স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের ডেকে পাঠানো হবে। কারণ, তাঁরাই স্কুলের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই শিক্ষক ও পড়ুয়াদের ভালমন্দের দায় তাঁদেরও নিতে হবে। কী কারণে পড়ুয়ারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি এবং কী করলে তাদের লেখাপড়ার মানের উন্নতি হবে, সে বিষয়ে রিপোর্ট ও প্রস্তাব চাওয়া হবে। সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করবে জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর। এ প্রসঙ্গে ডিআই বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের এই দায়িত্ব নিতেই হবে।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, আলাদা করে প্রধান শিক্ষকদের ডেকে পাঠানো হবে না। কিন্তু স্কুলেই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে রিপোর্ট চাওয়া হবে। প্রধান শিক্ষক যে হেতু স্কুলের প্রধান, তাই স্কুলের ভালমন্দের অধিকাংশ দায় তাঁকেই নিতে হবে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘কোথাও কোনও অসুবিধা থাকলে দফতর সেই পরিষেবা দেবে। কিন্তু পঠনপাঠনের দিকটি শিক্ষকদের তো লক্ষ রাখতেই হবে।’’ কলকাতায় অবশ্য পৃথক ভাবে কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয় না। দফতরের এক কর্তা জানান, স্কুল পরিদর্শনের সময়েই প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। কোথায়, কী কারণে খামতি রয়েছে, সেটা নিয়ে কার্যত ময়না-তদন্ত চলে। তার পরে সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত হয়। না-হলে গোটা প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদামচন্দ্র জানা বলেন, ‘‘এই গোটা বিষয়ে প্রধান শিক্ষকদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তাঁদের হাতে যথাযথ ক্ষমতাও দেওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন