আলোড়ন পূর্ব মেদিনীপুরে

ছড়িয়ে হোমের সামগ্রী, ঘি-সিঁদুর মাখানো দুই তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার

একই জেলার দুই প্রান্তে উদ্ধার হল দুই তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ। শনিবার, লক্ষ্মীপুজোর সকালে তমলুক এবং নন্দীগ্রামের ওই ঘটনায় গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আলোড়ন পড়ে। তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামে বছর আঠারোর তরুণীর দেহটি পড়েছিল পানের বরজে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

তমলুক ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

গড়কিল্লা গ্রামে তদন্তে পুলিশ। ছূবি :পার্থপ্রতিম দাস।

একই জেলার দুই প্রান্তে উদ্ধার হল দুই তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ। শনিবার, লক্ষ্মীপুজোর সকালে তমলুক এবং নন্দীগ্রামের ওই ঘটনায় গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আলোড়ন পড়ে। তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামে বছর আঠারোর তরুণীর দেহটি পড়েছিল পানের বরজে। সেখান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের মনুচক জালপাই গ্রামে একটি ঝোপে বছর পঁচিশের আর এক তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ পাওয়া যায়। দু’টি ক্ষেত্রেই মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে খোঁজ মেলেনি মৃতদেহ দু’টির মুণ্ডেরও।

Advertisement

গড়কিল্লায় যে দেহটি পাওয়া গিয়েছে, তাতে আবার সিঁদুরের দাগ রয়েছে। পাশে মিলেছে ধূপ, মাটির সরা, নিমকাঠ-সহ যজ্ঞের নানা সামগ্রী। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও তান্ত্রিক জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘মৃতদেহে দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তন্ত্র সাধনার যোগ রয়েছে। কোনও তান্ত্রিক জড়িত থাকতে পারে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশেরই একটি সূত্র অবশ্য মনে করছে, খুনের পর নজর ঘোরানোর জন্যও পুজোর সামগ্রী রাখা হয়ে থাকতে পারে। নন্দীগ্রামে উদ্ধার হওয়া তরুণীর মৃতদেহ ও আশপাশে অবশ্য এমন কোনও উপকরণ মেলেনি। দু’টি ঘটনার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে যোগসূত্রও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

তমলুক শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে গ়ড়কিল্লা গ্রাম। এ দিন সকাল পৌনে আটটা নাগাদ জ্যাঠা চণ্ডীচরণ মান্নার পান বরজের পাশের পুকুর পা়ড়ে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছিলেন উত্তম মান্না। তিনিই প্রথম বরজের মধ্যে তরুণীর মুণ্ডহীন দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। উত্তমবাবুই স্থানীয়দের ডেকে আনেন। ঘটনা জানাজানি হতেই কয়েকশো লোক জড়ো হয়ে যায়। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘বরজে দেহ পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠি। কাছে গিয়ে দেখি একটি মেয়ের গলাকাটা দেহ। দেহের চারপাশে হলুদের গুঁড়ো ছড়ানো, নিমকাঠি পোঁতা।’’ খবর পেয়ে আসেন চণ্ডীচরণবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘দিন কুড়ি আগে এক কাঠা জমিতে পান লাগিয়েছিলাম। বরজের দিকে সন্ধ্যার পর কেউ যায়নি। পাড়ার লোকও রাত ন’টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। কী করে এমন ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

ওই তরুণীকে গ্রামেই খুন করা হয়েছে না খুনের পরে দেহটি আনা হয়েছে, তা পুলিশের কাছেও স্পষ্ট নয়। এ দিন তল্লাশির জন্য খড়্গপুর আরপিএফের ডগ স্কোয়াডের কুকুর আনা হয়েছিল। তবে কাটা মুণ্ডের হদিস মেলেনি। চণ্ডীচরণবাবুর ছেলে, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক লক্ষ্মণ মান্না বলেন, ‘‘গ্রামে তান্ত্রিক নেই বলেই জানি। তবে এই ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত।’’ স্থানীয় নীলকুণ্ঠা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় ভঞ্জের বক্তব্য, ‘‘উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এটি নৃশংস ঘটনা। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করুক।’’

নন্দীগ্রামে মনুচক জালপাই গ্রামেও তরুণীর মুণ্ডহীন দেহটি মেলে এ দিন সকালেই। রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে বস্তাবন্দি ছিল দেহটি। বস্তা থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। তাতেই সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। পুলিশ এসে বস্তা খুলে দেখে, ভেতরে এক তরুণীর মুণ্ডহীন বিকৃত দেহ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ঝোপের মধ্যে পাওয়া দেহটিতে পচন ধরে গিয়েছিল। তাই মনে হচ্ছে ওই তরুণীকে দিন দু’য়েক আগে খুন করা হয়েছে। মৃতের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন