Covid Vaccination

Covid vaccination: দ্বিতীয় টিকা নেননি ৬০ লক্ষ! বুস্টারে অনীহা বয়স্কদেরও, উদ্বেগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর

গত জুন মাস থেকে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে বাড়তে দু’দিন আগেই তা দেড় হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৮
Share:

করোনা টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা দেখে শঙ্কিত এবং স্তম্ভিত চিকিৎসক মহল

গত জুন মাস থেকে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে বাড়তে দু’দিন আগেই তা দেড় হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। কোভিডের এই সাম্প্রতিক স্ফীতি দেখে প্রশাসনের তরফে যেখানে অক্ষরে অক্ষরে কোভিডবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে করোনা টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা দেখে শঙ্কিত এবং স্তম্ভিত চিকিৎসক মহল। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে, বুস্টার টিকা তো দূর অস্ত, রাজ্যের ৬০ লক্ষের বেশি মানুষ এখনও করোনার দ্বিতীয় টিকাই নেননি। আর বুস্টার টিকা নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অনীহা তো রয়েছেই, অগ্রাধিকার পাওয়া যাটোর্ধ্বদের অনেকেই তা নিতে চাইছেন না বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে অন্তত ৭ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে। তাঁদের মধ্যে ৬০ লক্ষের বেশি মানুষ এখনও দ্বিতীয় টিকা নেননি। অর্থাৎ, খাতায়-কলমে এঁদের করোনা টিকার কোর্স অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। বুস্টার টিকা নেননি রাজ্যের রাজ্যের অন্তত ২৩ লক্ষ ষাটোর্ধ্ব নাগরিক। প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণের ভয়ঙ্কর স্ফীতির আবহে বুস্টার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের।

সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে এমন অনীহা দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলায় জেলায় দ্রুত টিকাকরণ শেষ করতে জেলা প্রশাসনগুলিকেও গত এক মাসে তিন-তিনটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলছেন, ‘‘যাঁদের টিকা নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, তাঁদের সকলকে আমরা টিকা নিয়ে নিতে বলছি। এখন তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তিনি জানান, দুয়ারে টিকাকরণের জন্য এলাকাভিত্তিক চার জনের দল তৈরি করা হচ্ছে। এই দল প্রতি দিন ১০০-১৫০টি বাড়িতে যাচ্ছে। দলের সদস্যেরা পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নিচ্ছেন, কারা টিকা নিয়েছেন, আর কারা টিকা নেননি।

Advertisement

বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ফলে টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা আরও বেশি করে ধরা পড়ছে বলে জানান স্বাস্থ্যকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে গিয়ে টিকা দিয়ে আসা হচ্ছে, তার পরেও অনেকে টিকা নিতে চাইছেন না। কেউ কেউ বলছেন, ‘এখন আর কোভিড নেই। টিকা নিয়ে আর কী হবে?’ টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই জন্য আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, যাতে তাঁদের কথায় অন্তত টিকা নিতে রাজি হন সাধারণ মানুষ।’’

দেশের অতিমারি-পর্ব শুরুর সময় থেকে করোনা সংক্রমণের যে তীব্রতা ছিল, তা এখন না থাকলেও টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ডিরেক্টর শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম টিকা নিয়ে থাকলে অবশ্যই দ্বিতীয় টিকা নেওয়া উচিত। এখনও যাঁরা টিকা নিতে চাইছেন না, তাঁরা শীঘ্রই টিকা নিয়ে নিন। এতে ভবিষ্যতে কোভিড হলেও শারীরিক অসুস্থতা গুরুতর হবে না। টিকা নেওয়া থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আইসিইউ-তে ভর্তির হারও নগণ্য। আর করোনা টিকা নেওয়ার ফলে মৃত্যুহার যে কমেছে, তা তো প্রমাণিত। তা হলে কেন টিকা নেবে না লোকে?’’ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়ও বলছেন, ‘‘কোভিডের স্ফীতি যে শুরু হয়েছে, তা তো পরিষ্কার। এই ঢেউয়ের তীব্রতা কম হলেও টিকা নেওয়া জরুরি। আর স্বাস্থ্য দফতরও টিকাকরণে জোর দিচ্ছে।’’

শেষে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উদ্দেশেও শুভ্রজ্যোতি বলেন, ‘‘এখন বাজারে যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে, তা অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। সেই সময় কোভিডের যে রূপ সক্রিয় ছিল, তা হয়তো এখন আর নেই। এখন করোনাভাইরাসের যে রূপ সক্রিয় রয়েছে, তার মোকাবিলাতেও নতুন টিকা তৈরি করা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন