সুচেতা-হত্যা মামলা

‘উনিই ব্যাগ নিয়ে ভুটভুটিতে ওঠেন’ সমরেশকে দেখিয়ে বললেন ঘাটকর্মী

এজলাসের লকআপে ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন সমরেশ সরকার। সরকারি আইনজীবীর প্রশ্ন শুনেই লকআপের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ব্যারাকপুরের নিমাইতীর্থ ফেরি সার্ভিসের কর্মী সুজয় চট্টোপাধ্যায় বলে উঠলেন ‘‘‘হ্যাঁ, ওই তো, ওই লোকটা।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:০৭
Share:

এজলাসের লকআপে ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন সমরেশ সরকার। সরকারি আইনজীবীর প্রশ্ন শুনেই লকআপের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ব্যারাকপুরের নিমাইতীর্থ ফেরি সার্ভিসের কর্মী সুজয় চট্টোপাধ্যায় বলে উঠলেন ‘‘‘হ্যাঁ, ওই তো, ওই লোকটা।’’

Advertisement

দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনা খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এ ভাবেই অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (অধুনা সাসপেন্ডেড) সমরেশ সরকারকে শনাক্ত করলেন সুজয়বাবু। এর আগে ভুটভুটির মাঝি মুকুন্দ মান্নাও আদালতে সমরেশকে শনাক্ত করেন।

সুচেতার দেহ তিন টুকরো করে তিনটি ব্যাগে ভরে এবং দীপাঞ্জনার দেহ অন্য একটি ব্যাগে ভরে গত বছরের ২৯ অগস্ট সকালে ব্যারাকপুরের মনিরামপুর এবং শেওড়াফুলি ২ পয়সার ঘাটের মাঝে যাত্রীবোঝাই ভুটভুটি থেকে সমরেশ গঙ্গায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ। ওই দিন মনিরামপুরের ঘাটেই ছিলেন নিমাইতীর্থ ফেরি সার্ভিসের কর্মী সুজয়বাবু।

Advertisement

এ দিন শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রাজা চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে সাক্ষ্য দিতে এসে সরকারি কৌঁসুলী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে সুজয়বাবু জানান, গত বছরের ২৯ অগস্ট সকাল পৌঁনে ন’টা নাগাদ এক ব্যক্তি চারটি ব্যাগ নিয়ে ঘাটে আসেন। তার মধ্যে দু’টি ট্রলি ব্যাগ, একটি পিঠব্যাগ এবং একটি হাত ব্যাগ ছিল। তিনি ওই ব্যক্তিকে ট্রলি ব্যাগ দু’টির ভাড়া লাগবে বলে জানান। সেই মতো ট্রলি ব্যাগ দু’টির ভাড়া দেন সমরেশ। ‘লাগেজ’ বেশি থাকায় তাঁর টানতে কষ্ট হচ্ছিল‌। সে জন‌্য ঘাটেরই এক কর্মী একটি ট্রলি ব্যাগ ভুটভুটি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তাঁকে সাহায্য করেন।

পরের যে ভুটভুটি শেওড়াফুলি থেকে মনিরামপুরে আসে, তার যাত্রীদের কাছে তিনি শোনেন যে, এক ব্যক্তি ভুটভুটি থেকে চারটি ব্যাগ গঙ্গায় ফেলে দিয়েছেন। কৌতূহলবশে তিন‌ি শেওড়াফুলি ঘাটে গিয়ে দেখেন, টিকিট কাউন্টারে এক ব্যক্তিকে আটকে রাখা হয়েছে। তাকেই তিনি ট্রলি ব্যাগের ভাড়া দিতে বলেছিলেন। জানতে পারেন, তার নাম সমরেশ সরকার, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। এর পরে সুজয়বাবু মনিরামপুরে ফিরে যান‌। সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে যা দেখেছিলেন, সব পুলিশকে বলেন। ঘটনার দু’দিন পরে শ্রীরামপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দিও দেন‌ তিনি।

এ দিন জয়দীপবাবু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, সে দিন যাঁকে দেখেছিলেন আদালতে তিনি আছেন? প্রশ্ন শুনে সমরেশের দিকে আঙুল তুলে ধরেন সুজয়বাবু। আসামীপক্ষের আইনজীবী ধূর্জটিনারায়ণ পাকড়াশি সুজয়বাবুকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জার’দের চেনেন? সুজয়বাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ। চিনি।’’ সমরেশকে দেখিয়ে ধূর্জটিবাবুর প্রশ্ন, ইনি কী ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জার’? সুজয়বাবু জবাব দেন, ‘না।’’ ধূর্জটিবাবু এর পরে প্রশ্ন করেন, তিনিই কী জানলার ভিতর থেকে টিকিট দিয়েছিলেন? সুজয়বাবু বলেন, ‘‘না, অন্য কর্মী টিকিট দিয়েছিলেন। আমি দাঁড়িয়েছিলাম টিকিট পরীক্ষা করা বা লাগেজের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য।’’

ধূর্জটিবাবু বলেন‌, ‘‘আমি বলছি, উনি ভুটভুটিতে ওঠেনইনি। তাঁর হাতে কোনও ব্যাগ ছিল না।’’ তা শুনে সুজয়বাবু বলেন, ‘‘না। উনিই ব্যাগ নিয়ে ভুটভুটিতে উঠেছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন