অতিবর্ষণে আরও বড় দুর্যোগের চোখরাঙানি

দিনটা কেমন যাবে, বোঝা যায় সকালেই। বুধবার সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেও গেল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। সকাল হয়েছিল টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে। দিন যত এগিয়েছে, কালো হয়েছে আকাশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

ভোগান্তির যানজট। বুধবার উল্টোডাঙায় সৌভিক দে-র তোলা ছবি।

দিনটা কেমন যাবে, বোঝা যায় সকালেই।

Advertisement

বুধবার সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেও গেল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। সকাল হয়েছিল টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে। দিন যত এগিয়েছে, কালো হয়েছে আকাশ। আর সন্ধ্যার পরে আকাশ ভেঙে নেমেছে বৃষ্টি। ঝড় বয়েছে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে। বাড়ির কাচ ভেঙেছে ঝনঝনিয়ে। মহানগরী এবং অন্যত্র ভেঙেছে অজস্র গাছ। ছিঁড়েছে ট্রেনের তারও। কলকাতা নামতে না-পেরে চক্কর কেটেছে বিমান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচিল ভেঙে এক যুবক ও এক তরুণী এবং বেলেঘাটায় গাছ চাপা পড়ে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে।

এই দুর্যোগের জন্য নিম্নচাপকেই দায়ী করছে আবহাওয়া দফতর। তারা জানায়, দিঘার কাছে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে যে-নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল, সেটি বুধবার শক্তি বাড়িয়ে অতিগভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেই অতিগভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ছিল দিঘার কাছে। সন্ধ্যায় সেটি স্থলভূমির খুব কাছে চলে আসে। তারই দাপটে ঘনিয়ে আসে দুর্যোগ।

Advertisement

দুর্যোগের ভূমিকা অবশ্য হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার গভীর রাতেই। ওই রাতে কখনও ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। কখনও চলে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সমানে সঙ্গত করে গিয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। এ দিন সেই যুগলবন্দিই উত্তাল হয়ে ওঠে। চলতি মরসুমে বুধবারেই প্রথম বৃষ্টি চলল সারা দিন।

আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, দুর্যোগ এ দিন যে-রূপ দেখাল, সেটা তার সম্ভাব্য ভয়াবহ চেহারার একটি দিক মাত্র। অতিগভীর নিম্নচাপটিতে আরও প্রবল দুর্যোগের ইঙ্গিত ছিল। ওই নিম্নচাপের কেন্দ্রে বায়ুপ্রবাহের বিচিত্র গতিবিধিই জানান দিচ্ছিল, ঘূর্ণিঝড় আসছে। সকালে আবহবিদেরা তা জানিয়েও দেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ঘূর্ণিঝড় আসেনি। দুপুরের পরে অতিগভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রস্থলের বায়ুপ্রবাহে হঠাৎই বড় বদল আসে। এবং সেই পরিবর্তনই নিম্নচাপটিকে ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠতে দেয়নি।

ঘূর্ণিঝড় এল না বটে, কিন্তু বিপদ কাটেনি বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। শুধু বদলাতে পারে বিপদের রূপ। ঘূর্ণিঝড়ের বদলে বন্যা। অতিবর্ষণের হাত ধরে। কী ভাবে?

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে বাংলাদেশের দিকে তার সরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এখন যেটা হল, তাতে সুগভীর নিম্নচাপটি স্থলভূমির ভিতরে ঢুকে চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে। তার ফলে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি তো হবেই। অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা আছে দামোদর উপত্যকাতেও। সেই প্রবল বর্ষণের ধাক্কা লাগবে গাঙ্গেয় বঙ্গে। এক আবহবিদ জানান, এ দিন সন্ধ্যার পরে কলকাতায় যে-ভাবে বৃষ্টি হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায়। আজ ও কাল (শুক্রবার) ঝাড়খণ্ডেও প্রবল বর্ষণ হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষকেও।

এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি যতটা না ভয়ের, তার থেকেও তাঁদের বেশি ভাবাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের সম্ভাব্য অতিবৃষ্টি। কারণ, ঝাড়খণ্ডের সেই জল যখন নীচের দিকে নেমে আসবে, তা প্লাবিত করে দেবে বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে।

সেই বিপদের আগেই বুধবার রাতে মিনিট সাতেকের খণ্ডপ্রলয় আছড়ে পড়ে কলকাতায়। নিম্নচাপের ফলে পুঞ্জীভূত পর্বতপ্রমাণ মেঘ ছত্রখান হয়ে যায়। ধেয়ে আসে প্রচণ্ড ঝড়। নগর লন্ডভন্ড করে দিয়ে উধাও হয়ে যায় সে। বৃষ্টি চলতেই থাকে।

আবহাওয়া ভাল হবে কবে?

শনিবার বৃষ্টি কমে এলেও আগামী সপ্তাহের গোড়ায় পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে পারে, জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে। সে কতটা শক্তিশালী হবে এবং ঠিক কোথায় কেন্দ্রীভূত হবে, তা বোঝা যাবে রবিবার। নিম্নচাপটি যদি ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে কেন্দ্রীভূত হয়, তা হলে ফের প্রতিকূল হয়ে উঠবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া। পরপর নিম্নচাপ মৌসুমি বায়ুকে এতটাই সক্রিয় করে দিয়েছে যে, অগস্টের বাকি সময়টা গোটা দক্ষিণবঙ্গেই বৃষ্টি হতে পারে।

উপকূলরক্ষী বাহিনী জানাচ্ছে, গভীর নিম্নচাপের কারণে বেশ কয়েক দিন ধরেই সাগর উত্তাল। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করে জারি করা সতর্কতা আপাতত বহাল থাকছে। গত সপ্তাহেই বেশ কিছু নৌকা সমুদ্রে গিয়ে বিপদে পড়েছিল নিম্নচাপের দাপটেই। ২০টি নৌকা এবং ২৫৪ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শনিবার ফের দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক দফতর থেকে দু’টি নৌকা নিখোঁজ হয়েছে বলে জানানো হয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। মহাগৌরী নামে একটি নৌকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে পাঁচ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তিন জনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন