কবুল ধৃতের

তরুণীকে নিয়েই ছুরি কেনা, তার পরে বলি

বাজারে গিয়ে যজ্ঞের নানা সামগ্রী ও ফলমূল কিনেছিল বছর বিয়াল্লিশের লোকটি। সঙ্গে বছর চব্বিশের এক তরুণী। তাকে সঙ্গে নিয়েই লোকটি যায় ছুরি-কাঁচির দোকানে। ছুরি কেনার সময় তরুণী প্রশ্ন করে, ‘ছুরি লাগবে কীসে?’ হাসিমুখে লোকটি বলে, ‘কাল লক্ষ্মীপুজো তো। ফল কাটতে লাগবে।’

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

কোথায় কাটা মুন্ডু। দেখিয়ে দিচ্ছে ধৃত রামপদ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

বাজারে গিয়ে যজ্ঞের নানা সামগ্রী ও ফলমূল কিনেছিল বছর বিয়াল্লিশের লোকটি। সঙ্গে বছর চব্বিশের এক তরুণী। তাকে সঙ্গে নিয়েই লোকটি যায় ছুরি-কাঁচির দোকানে। ছুরি কেনার সময় তরুণী প্রশ্ন করে, ‘ছুরি লাগবে কীসে?’ হাসিমুখে লোকটি বলে, ‘কাল লক্ষ্মীপুজো তো। ফল কাটতে লাগবে।’

Advertisement

ওই ছুরি দিয়েই যে তার ধড়-মুণ্ড আলাদা করা হবে, তা তখন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তরুণী। গত শনিবার তমলুকের গড়কিল্লায় তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রামেরই যুবক রামপদ মান্নাকে গ্রেফতারের পরে এমন ঘটনাই তদন্তকারীদের সামনে এসেছে।

রামপদকে জেরায় পুলিশ জেনেছে, নরবলি দিলে পুণ্যলাভ হয়, আর্থিক সমৃদ্ধি আসে, নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ভূতপ্রেতকে— তন্ত্র সাধনার বইয়ে পড়া এমন নির্দেশ থেকেই গত শুক্রবার ওই তরুণীকে ‘বলি’ দেয় সে। শ্বাসরোধ করে খুনের পরে কেটে নেয় তরুণীর মুণ্ড। এ দিন গড়কিল্লার পাশের উত্তর উসদপুর গ্রামে খালের মধ্যে মেলে মুণ্ডটি। তবে রাত পর্যন্ত তরুণীর পরিচয় জানা যায়নি। পাওয়া যায়নি ছুরিও।

Advertisement

গড়কিল্লা গ্রামের যে পান বরজে তরুণীর দেহ মিলেছিল, তার মালিক রামপদরই বাবা চণ্ডীচরণ মান্না। রামপদ কলকাতার বাগুইআটিতে এক সেলুনে কাজ করত। তপন মান্না নাম নিয়ে স্ত্রী ও তিন মেয়ের সঙ্গে সেখানে থাকত সে। মঙ্গলবার সকালে বাগুইআটি থেকেই রামপদকে গ্রেফতার করে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ। রামপদর কাছে তন্ত্রসাধনার বইও মিলেছে। আটক করা হয়েছে রামপদর বাবা চণ্ডীচরণ, মা সাবিত্রী, শ্বশুর নিমাই মান্না ও শাশুড়ি পুষ্পরানিকে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, ‘‘তরুণীকে খুনের কথা স্বীকার করেছে রামপদ। তন্ত্র সাধনায় যুক্ত থাকার কথাও জানিয়েছে।’’ আজ, বুধবার ধৃতকে আদালতে তোলা হবে।

গড়কিল্লা গ্রামে তরুণীর দেহ উদ্ধারের দিনই তন্ত্র-মন্ত্রের একটা আভাস পেয়েছিল পুলিশ। কারণ, তরুণীর শরীর জুড়ে ছিল সিঁদুরের দাগ, পাশে রাখা ছিল মাটির সরা, ধূপ, নিমকাঠ-সহ যজ্ঞের নানা সামগ্রী। এই সূত্র ধরে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে,
গ্রামেরই যুবক রামপদর তন্ত্রসাধনার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। তখন রামপদর এক ভাইকে জেরা করা হয়। তার কাছেই রামপদর মোবাইল নম্বরপায় পুলিশ। সেই সূত্র ধরে পুলিশ পৌঁছয় বাগুইআটিতে।

কিন্তু তন্ত্রসাধনার প্রতি নিছক আগ্রহ থেকে একেবারে নরবলি?

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীহরিবাবুর জবাব, ‘‘রামপদ একটা সময় বিভিন্ন মেলায় ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াত। মেলাতেই তন্ত্রের নানা বই তার হাতে আসে। তন্ত্রসাধনা শুরু করে সে।’’ তবে রামপদকে বারবার জেরার পরেও তরুণীর পরিচয় পুলিশ জানতে পারেনি। পুলিশকে সে জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধেয় মেচেদা বাসস্ট্যান্ডে ওই তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। রামপদর কাছে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে তরুণী। তন্ত্র-মন্ত্রের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব বলায় তরুণী নাকি গড়কিল্লা গ্রামে যেতে রাজি হয়ে যায়। এরপর মেচেদা বাজার থেকেই যজ্ঞের সামগ্রী, ফলমূল কেনে রামপদ। তারপর হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে ভ্যানোয় চেপে দু’জনে পৌঁছয় গড়কিল্লায়। একসঙ্গে মদ্যপানও করে তারা। মেয়েটি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে পানবরজে এনে তাকে খুন করে রামপদ। তখন রাত এগারোটা। এরপরে দু’ঘণ্টা ওই বরজে বসেই সে পুজোআচ্চাও করে। রাত একটা নাগাদ ওই তরুণীর সালোয়ার কামিজ দিয়েই কাটা মুণ্ডটি বেঁধে পাশের গ্রামের খালে ফেলে চম্পট দেয় রামপদ।

রামপদ সব সত্যি বলছে কিনা জানতে দফায় দফায় জেরা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে চেষ্টা চলছে তরুণীর পরিচয় জানার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন