এ বার হেলমেট বিলি।
তবে ধরনটা অন্য রকম। এত দিন সরকারি অর্থে সাইকেল, জুতো ও স্কুলের ব্যাগ কিনে পড়ুয়াদের বিলি করেছে রাজ্য। হেলমেট বিলির ক্ষেত্রে সরকার নিজেকে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত করেনি। আয়োজকের ভূমিকায় থাকলেও নেপথ্যে। রাজ্য সরকারেরই আহ্বানে সাড়া দিয়ে হেলমেট জোগাচ্ছে বিভিন্ন বণিকসভা, তেল সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই ‘দান’-এর হেলমেট পাড়ায় পাড়ায় ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মন্ত্রী-বিধায়ক ও পুলিশ-পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা।
পথ নিরাপত্তায় সচেতনতার সুর বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ প্রকল্পে তাঁরই স্লোগান ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। ইতিমধ্যে নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে হেলমেট বিলির সূচনা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। হাওড়াতেও এক হাজার হেলমেট বিলি হয়েছে। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনায়। আজ, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পরে হেলমেট বিলি হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
তবে নবান্ন চাইছে, এমন বিক্ষিপ্ত ভাবে না করে এই কাজকে একটি কেন্দ্রীয় উদ্যোগের আওতায় আনতে। তাই প্রথম দফায় এক লপ্তে ৫০ হাজার হেলমেট বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। ১৮ অগস্ট, রাখিপূর্ণিমার দিন, যুব ও কল্যাণ দফতর রাজ্য জুড়ে যে পথ-সচেতনতার অনুষ্ঠান করবে, সেখানেও হেলমেট বিলি হওয়ার কথা। আর রাখিতে লেখা থাকবে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’। ১৯ অগস্ট পথ নিরাপত্তার বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী হাঁটবেন মৌলালি থেকে ধর্মতলা। সে দিনও কলকাতা পুলিশ হেলমেট বিলি করবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তবে হেলমেটের এই বিলি-বন্দোবস্তের মধ্যে সরকার থাকছে না। খরচও জোগাচ্ছে না। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘হেলমেট কিনতে হলে টেন্ডার করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি।’’ তাই হেলমেট দানের আর্জি জানানো হয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আমাদের নজর মূলত কলেজ ছাত্রছাত্রী ও যুব সম্প্রদায়ের দিকে। কারণ, মোটরসাইকেল চালানোর সময় তাঁরাই বেশি বেপরোয়া।’’ যাঁদের মোটরসাইকেল আছে অথচ হেলমেট নেই, তাঁরাই তালিকায় নাম তুলতে পারবেন। নবান্নের এক কর্তা জানান, পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকেও এই প্রকল্পে সামিল হতে বলা হয়েছে।
এক দল অফিসার বলছেন, উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়া কিংবা কচিকাঁচাদের জুতো ও স্কুলের ব্যাগ বিলির ক্ষেত্রে একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু যাঁরা ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ করে মোটরসাইকেল কিনতে পারেন, তাঁদের কেন নিখরচায় হেলমেট দেওয়া হবে? সেই হেলমেট সংগ্রহে সরকারই বা কেন বেসরকারি সংস্থার কাছে আর্জি জানাবে?
পরিবহণমন্ত্রীর মতে, গ্রামেগঞ্জে অনেক প্রান্তিক লোক ঋণ নিয়ে মোটরসাইকেল কেনেন। তাঁদের হাতে হেলমেট তুলে দেওয়া সরকারের দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালান, আর ক্লাবের ছেলেরা তাঁর হাতে হেলমেট তুলে দেন, এটা লজ্জার। লজ্জাও তো শিক্ষা দেয়।’’