বিধানসভায় মানস ভুঁইয়া। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে শেষ পর্যন্ত কড়া অবস্থানই নিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তাদের বক্তব্য, বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ সিপিএমকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সিদ্ধান্ত দলের কারও পক্ষেই অমান্য করা সম্ভব নয়। এর পরেও মানসবাবু যদি পদ না ছাড়েন, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। তার জন্য কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা কমে গেলে যাবে!
পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী সোমবার পরিষ্কার বলেছেন, ‘‘পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ বামেদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল হাইকম্যান্ডের। মানসবাবু অভিজ্ঞ নেতা। আশা করি, ওঁর শুভবুদ্ধির উদয় হবে! উনি ইস্তফা দেবেন।’’ এআইসিসি সূত্রে বলা হচ্ছে, পিএসি-র পদ নিয়ে মানসবাবু একগুচ্ছ মেসেজ পাঠিয়েছিলেন জোশীকে। চিঠি লিখেছিলেন দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকেও। তার পরেও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই পদ বামেদেরই ছেড়ে দিতে বলেন সনিয়া-রাহুল। এ সব জানার পরেও মানসবাবু পদ আঁকড়ে থাকলে দলের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপই করতে হবে। এআইসিসি সূত্রের ইঙ্গিত, প্রথমে সাসপেন্ড করা হতে পারে সবংয়ের বিধায়ককে।
আর মানসবাবু যদি এ সবের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন, তাতেও চিন্তিত নয় হাইকম্যান্ড। এআইসিসি-র এক নেতার কথায়, ‘‘দরকারে উনি আবার সবং থেকে জিতে এসে দেখাবেন! শান্তিপুরের অজয় ঘোষ কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পরে প্রথমে জিতেছিলেন। তার পরে কী হয়েছে, উদাহরণ তো হাতের সামনে আছে!’’
মানসবাবু অবশ্য এ দিন শুরুর দিকে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে পিএসি-র বৈঠক ডেকে দিয়েছিলেন। কিন্তু হাইকম্যান্ডের মনোভাব কঠোর হচ্ছে বুঝে রাতে তিনি ঈষৎ সুর নরম করেছেন। বলেছেন, দিল্লি ডেকে পাঠালেই তিনি গিয়ে জোশী বা সনিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। তবে মুখে এ কথা বললেও পিএসি-র ডাকা বৈঠক কিন্তু তিনি এখনও পিছোননি বা স্থগিত রাখেননি। মানসবাবুর যুক্তি, কমিটি ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকতে হয়। নইলে আর্থিক ও প্রশাসনিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে ওই কমিটিতে কংগ্রেসের তিন বিধায়ক আজ, মঙ্গলবার বৈঠক থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বৈঠকে যাচ্ছেন না কোনও বাম বিধায়কও। আর পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তৃণমূল ঠিক করেছে, ২০ সদস্যের পিএসি-র মধ্যে তাদের বিধায়কেরা বৈঠকে যাবেন!
ঘরে বিবাদ বাধিয়ে দেওয়ার তৃণমূলের কৌশল যে অনেকটাই সফল, তা-ও ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে মানসবাবু প্রকাশ্যে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের ঘাড়ে আবার দোষ চাপানোয়! বিধানসভা ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে মানসবাবু অভিযোগ করেছেন, ‘‘মান্নান চিরকাল বিক্ষুব্ধ রাজনীতি করেছেন। এখনও করছেন! প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ভুল বুঝিয়ে আমার সঙ্গে এআইসিসি-র বিরোধ সৃষ্টি করেছেন।’’ তাঁকে পিএসি-র পদ ছাড়তে বলে ৩৯ জন কংগ্রেস বিধায়ক যে প্রস্তাবে সই করেছেন, তার কোনও প্রতিলিপি তিনি দুপুর পর্যন্ত পাননি বলেও দাবি করেছেন। মান্নান অবশ্য কাজিয়ায় না জড়িয়ে শুধু বলেছেন, ‘‘আমি দলনেতা। আমার ভুল হতে পারে। কিন্তু দিল্লি যা বলেছে, তা-ই করেছি।’’
বিধানসভার লবিতে এ দিন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল মানসবাবুর। সুজনবাবুর সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধ নেই বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মানসবাবু। সুজনবাবু আবার পাল্টা বলেছেন, বাম পরিষদীয় নেতার নাম জড়িয়ে মানসবাবু যে সব বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে গোটা ঘটনাটা সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে! সুজনবাবুর কথায়, ‘‘কোনও পদ বা লালবাতির গাড়ির জন্য বিধানসভায় আসিনি। সরকারের মুখোশ খোলার কাজ কমিটির সাধারণ সদস্য হিসাবেও করতে পারি। এই কথাটা মানসবাবু ও মান্নানদা, দু’জনকেই জানিয়েছি।’’ তাঁর বক্তব্য, তাঁরা পিএসি-র বৈঠক বয়কট করছেন না। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যেতে হবে তাঁকে। কমিটির আরও দুই সদস্য অশোক ভট্টাচার্য চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদ গিয়েছেন এবং বিশ্বনাথ চৌধুরী কলকাতায় আসতে পারছেন না বলে আগেই জানিয়েছেন।