সঙ্গীতা কোথায়, রিপোর্ট তলব করল হাইকোর্ট

সাড়ে ৩ মাস আগে শিলিগুড়ির জিম-পার্লার থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তরুণী কর্মী সঙ্গীতা কুণ্ডু কোথায় আছেন, তা নিয়ে সিআইডি-র কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

কিশোর সাহা ও শমীক ঘোষ

শিলিগুড়ি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২১
Share:

সাড়ে ৩ মাস আগে শিলিগুড়ির জিম-পার্লার থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তরুণী কর্মী সঙ্গীতা কুণ্ডু কোথায় আছেন, তা নিয়ে সিআইডি-র কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ওই নির্দেশ দেন। আদালত সূত্রের খবর, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

Advertisement

পুলিশি তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবং সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তরুণীর দাদা শম্ভু কুণ্ডু। তাঁর অভিযোগ, সঙ্গীতা নিখোঁজ হওয়ার পরে খোঁজ নিতে গেলে গোড়ায় জিম মালিক পরিমল সরকার হুমকি দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ভক্তিনগর থানার দুই অফিসার প্রথমে পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ নিতে চাননি। তৃতীয়ত, একাধিক পুলিশ কর্তা, প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রীর সঙ্গে পরিমলবাবুর ঘনিষ্ঠতা থাকায় সঙ্গীতাকে খুঁজে বের করতে সদর্থক পদক্ষেপ হচ্ছে না বলে জানান শম্ভুবাবুর দুই আইনজীবী বৈদুর্য্য ঘোষাল ও অর্ণব সেনগুপ্ত। তবে সরকারি আইনজীবী অনিরুদ্ধ মণ্ডল আদালতে জানান, তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে। তদন্তকারী সংস্থা পাঁচ জনকে গ্রেফতারও করেছে। তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি।

দু’পক্ষের এই সওয়াল শোনার পরেই বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দেন, নিখোঁজের তদন্তে নেমে কী কী করা হয়েছে, তদন্তের অগ্রগতিই বা কতটা হয়েছে, তা বিস্তারিত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে তাঁর এজলাসে।

Advertisement

গত ১৭ অগস্ট শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি জিম ও পার্লার থেকে নিখোঁজ হন ২৭ বছরের সঙ্গীতা। ওই সংস্থার কর্ণধার পরিমলবাবুর অফিস লাগোয়া ফ্ল্যাটেই তরুণী থাকতেন। ফ্ল্যাটটি পরিমলবাবুরই। ২৬ অগস্ট পরিমলবাবু ভক্তিনগর থানায় ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন। ৫ সেপ্টেম্বর তরুণীর দাদা শম্ভুবাবু ও মা অঞ্জলি দেবী ভক্তিনগর থানায় পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা হলেও নভেম্বরের গোড়া পর্যন্ত তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ। সঙ্গীতার পরিবারের আরও অভিযোগ, পুলিশ কর্তা-অফিসার, একাধিক রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে পরিমলবাবুর ঘনিষ্ঠতার ফলেই তদন্ত এগোয়নি। এমনকী, ১৭ অগস্টের পরে খুব কম সময়ের মধ্যে শিলিগুড়িতে পরিমলবাবু আরও দুটি শাখা চালু করেন। তার একটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের এক মন্ত্রী, অন্যটি এক পুলিশকর্তা। সেই সব ছবি ফলাও করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রচারও করা হয়েছে।

এই নিয়ে হইচই শুরু হয় এবং শিলিগুড়ির মানুষ পথে নামেন। তার পরে নভেম্বরের গোড়ায় সঙ্গীতার পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যে ১৪ নভেম্বর পরিমল-সহ জিমের ৫ কর্মী গ্রেফতার হন। পুলিশ তদন্তভার সিআইডি’কে দেয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচার দাবি, পুলিশি তদন্তের পরে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হলেও নানা জায়গায় গিয়ে বিশদে খোঁজখবরের জন্যই দায়িত্ব সিআইডি’কে দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা চলছে বলে সিপি-র দাবি।

পরিমল অবশ্য গোড়া থেকেই দাবি করছেন, তিনি নিখোঁজের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বারেবারেই তিনি জানিয়েছেন, সঙ্গীতার হদিস পেলেই রহস্যের কিনারা হবে। কিন্তু, পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তদন্তে দেখা গিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার পরেও সঙ্গীতার মোবাইল জিমের এক কর্মীর হাতে ছিল। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, কোনও কিছু গোপন করার জন্যই ওই কর্মী পরিমলবাবুর নির্দেশে মোবাইলটি নিয়ে কলকাতায় যান। পরে সেই মোবাইল ফরাক্কার কাছে গঙ্গায় ফেলে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন