আলুর সঙ্কটে উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট, রিপোর্ট তলব

রাজ্যের আলু চাষিদের সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ। এই সঙ্কট কাটাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, শুক্রবার প্রধান বিচারপতি তা জানতে চেয়েছেন। আগামী ১৯ মার্চ রাজ্যকে এই নিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। অবিলম্বে সহায়ক মূল্যে দ্রুত আলু কেনা শুরুর দাবিতে শুক্রবারও বিভিন্ন জেলায় আলুর বিক্ষোভ দেখান চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে আলু। মালগাড়িতে আলু বোঝাই করা হচ্ছে। শুক্রবার তারকেশ্বরে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

রাজ্যের আলু চাষিদের সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ। এই সঙ্কট কাটাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, শুক্রবার প্রধান বিচারপতি তা জানতে চেয়েছেন। আগামী ১৯ মার্চ রাজ্যকে এই নিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

Advertisement

অবিলম্বে সহায়ক মূল্যে দ্রুত আলু কেনা শুরুর দাবিতে শুক্রবারও বিভিন্ন জেলায় আলুর বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। নবান্নে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে দেখা করে বাম পরিষদীয় দলের নেতারা অভিযোগ করেন, চাষিরা আলুর ন্যায্য দর পাচ্ছেন না। মাঠে দেড় থেকে দু’টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকার এখনই হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি ঘোরালো হবে জানিয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

নবান্নে প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, সরকার আগে ঘোষণা করেও চাষিদের থেকে আলু কেনা শুরু করেনি। আলুর সহায়ক মূল্য কেজি প্রতি ৮ টাকা করার দাবি জানান তাঁরা। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আলু কেনার সরকারি নির্দেশ বৃহস্পতিবারই জেলাশাসকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। দ্রুত আলু কেনা শুরু হবে।”

Advertisement

২০১২ সালে খাদ্যশস্যের সঠিক দাম না পেয়ে রাজ্যের কিছু চাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন অভিযোগ করে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস। ক’দিন আগে তাঁর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে পুরনো মামলার প্রেক্ষিতে নতুন আবেদন করে জানান, সে বারের মতো এই বছরেও চাষিরা সঙ্কটে পড়েছেন। আলুর দাম কমে গড়ে সাড়ে তিন টাকায় দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারের উচিত আলুর সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া, প্রয়োজনে সরাসরি চাষিদের থেকে আলু কেনা।

এ দিন ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যের অতিরিক্ত সহকারী অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়তোষ মজুমদার জানান, আলুচাষিদের সঙ্কট কাটাতে সরকার পদক্ষেপ করেছে। যা শুনে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “কৃষকেরা রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।” রবিশঙ্করবাবু দাবি করেন, ইতিমধ্যেই দু’জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়তোষবাবুকে প্রশ্ন করেন, “আলু বন্ড নিয়ে কী হয় তা জানেন?” জয়তোষবাবু অবশ্য দাবি করেন, দু’জন কৃষকের আত্মঘাতী হওয়ার খবর সঠিক নয়। এক কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে আলুর সঙ্কটের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়নি।

হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “মহারাষ্ট্রে চাষি মারা গেলে ওখানকার হাইকোর্ট আইনজীবীদের ডেকে কিছু বলে না তো? তবে আমরা এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আদালত যা বলেছে, তা আমরা করব।”

এ দিন ন্যায্য দামের দাবিতে হুগলির মহেশ্বরপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়। অন্য দিকে, পরিচয়পত্র নিয়ে কড়াকড়ির জেরে হিমঘরে আলু রাখার বন্ড সংগ্রহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন ছিটমহলের চাষিরা। বন্ড না পেলে অন্তত ১৫ মেট্রিক টন আলু নষ্ট হওয়ার ভয়ে উদ্বেগ বেড়েছে তাঁদের।

এক আলুচাষির স্ত্রীর অপমৃত্যুতে শোরগোল পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুরে। রিক্তা দোলুই (৪৭) নামে ওই মহিলার বাড়ি আনন্দপুর থানার আসকান্দায়। শুক্রবার সকালে জমিতে আলু তুলতে গিয়ে স্বামী জগন্নাথ দোলুইয়ের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। পরে বাড়ির কাছে একটি গাছে তাঁর দেহ ঝুলতে দেখা যায়। তবে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন