বছর দুয়েক আগে চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তা দেখানো হয়নি। অগত্যা আদালত অবমাননার মামলা করেন আবেদনকারিণী। কী কারণে ওই চাকরিপ্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখানো হয়নি আর কেনই বা তা দেখানো হবে না, তার সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ওই প্রার্থীকে উত্তরপত্র দেখানো হবে না কেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে তার সন্তোষজনক উত্তর দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই জবাব দিতে না-পারলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে উচ্চ আদালত।
আবেদনকারিণী চাকরিপ্রার্থীর নাম মণিকা ঘোষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাকরা এলাকার ওই তরুণী ২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা দেন। তাঁর আইনজীবী বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুকুমার সরকার জানান, পরীক্ষার অনেক পরে নিয়োগের প্যানেল তৈরি হয়। কিন্তু দেরিতে তৈরি সেই প্যানেলে মণিকাদেবী নিজের নাম দেখতে পাননি। তালিকায় ঠাঁই হল না কেন, সেটা জানার জন্যই পরীক্ষার খাতা দেখা দরকার। তাই তথ্য জানার আইনের সাহায্য নিয়ে উত্তরপত্র দেখতে চেয়ে ওই তরুণী ২০১৫ সালে আবেদন করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে।
আইনজীবীরা জানান, তাঁদের মক্কেলকে জানানো হয়, দু’বছরের বেশি পুরনো উত্তরপত্র সংসদে রাখা হয় না। ওই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ২০১০ সালে। কিন্তু উত্তরপত্র দেখার আবেদন করা হয়েছে পাঁচ বছর পরে। সংসদ তাঁকে এ কথা বললেও অন্য একটি সূত্রে ওই তরুণী প্রার্থী জানতে পারেন, যে-দিন তিনি তথ্য জানার আইনের সাহায্য নিয়ে উত্তরপত্র দেখার আবেদন করেন, সে-দিন একই আবেদন করেন অমলকৃষ্ণ ভট্টাচার্য নামে অন্য এক প্রার্থী। সংসদ কিন্তু অমলবাবুকে উত্তরপত্র দেখার সুযোগ দিয়েছে। একই পরীক্ষায় এক জন কর্মপ্রার্থী উত্তরপত্র দেখার সুযোগ পেলেন। অথচ আবেদন করা সত্ত্বেও তাঁকে খাতা না-দেখানোয় ২০১৫ সালেই হাইকোর্টে মামলা করেন মণিকাদেবী। অমলবাবুকে যে উত্তরপত্র দেখানো হয়েছে, সেই সংক্রান্ত নথিপত্রও মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করেন তিনি।
ওই বছরই সেই মামলার শুনানি হয়। উত্তরপত্র দেখাতে হবে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী। কিন্তু হাইকোর্টের সেই নির্দেশ অমান্য করা হয় বলে মণিকাদেবীর অভিযোগ। উপায়ান্তর না-দেখে তিনি আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন।
আইনজীবী বিশ্বজিৎবাবু জানান, মার্চে আদালত অবমাননার মামলাটির প্রথম শুনানি ছিল। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণবাবুকে নির্দেশ দেন, এত দিন উত্তরপত্র দেখানো হয়নি কেন, হলফনামা পেশ করে তা জানাতে হবে। চেয়ারম্যানের আইনজীবী এ দিন হলফনামা পেশ করে জানান, মণিকাদেবী লিখিত পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন, সেটা তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই হলফনামা দেখে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘নম্বর জানাতে বলা হয়নি। বলা হয়েছিল, উত্তরপত্র দেখাতে হবে।’’ তার পরেই উত্তরপত্র না-দেখানোর কারণ জানতে চান তিনি। সময় দেন ১৪ দিন।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, তথ্য জানার আইন অনুযায়ী আবেদন করলে এখন মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত যে-কোনও বিষয়ের যে-কোনও পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখতে দিতে তাঁরা বাধ্য।