উচ্চশিক্ষা দফতর সোমবার নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার তারিখ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তি । গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রান্ত নির্দেশ স্থগিত করে দিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। তাঁকে মিল্লি আল আমিন কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা পদ-সহ অন্যান্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার তারিখ ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়েছিল উচ্চশিক্ষা দফতরের একটি সাম্প্রতিক চিঠির জেরে। নির্দেশ সংশোধনের আর্জি জানিয়ে বৈশাখী পাল্টা চিঠি দেন। গত শুক্রবার আনন্দবাজার ডট কম-এ সেই খবর প্রকাশিত হয়। তার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের নির্দেশ স্থগিত করল উচ্চশিক্ষা দফতর। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানানো হয়েছে।
সোমবার উচ্চশিক্ষা দফতর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে লেখা হয়েছে, যেহেতু বৈশাখী আগের বিজ্ঞপ্তিটিতে কিছু ‘অসঙ্গতি এবং আইনি সমস্যা ’থাকার কথা জানিয়েছেন, তাই ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জারি হওয়া নির্দেশটি আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে এবং আইনি পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী নির্দেশ জারি করা হবে। তত দিন পর্যন্ত আগের নির্দেশটি স্থগিত থাকবে।
দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে দিন বৈঠক হয়েছিল কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের, তার পরের সকালেই শোভন-বৈশাখীর গোলপার্কের ফ্ল্যাটে উচ্চশিক্ষা দফতরের ওই চিঠি পৌঁছোয়। চিঠিতে তারিখ ছিল ‘৮ অগস্ট, ২০২৫’। বৈশাখী প্রশ্ন তুলেছিলেন, চিঠি অত আগে পাঠানো হয়ে থাকলে তা পৌঁছোতে এত দেরি হল কেন? উচ্চশিক্ষা দফতর যখন ছুটিতে, তখন বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে আচমকা ওই চিঠি কেন তাঁদের বাড়িতে পাঠানো হল, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।
তবে তাঁর মূল আপত্তি ছিল চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে। কারণ, চিঠিটিতে লেখা হয়েছিল, ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর নয়, ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বরেই বৈশাখী চাকরি ছেড়েছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বরের পরেও বৈশাখীকে চাকরিতে বহাল রাখার এবং পরে রামমোহন রায় কলেজে বদলি করার যে সব নির্দেশ আগে জারি হয়েছিল, সেগুলিকে বাতিল করা হচ্ছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছিল।
বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কাছেও ‘বিড়ম্বনা’ তৈরি করেছিল। কারণ, ওই চিঠি পাঠানোর পিঠোপিঠি সময়েই শোভনকে এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছিলেন মমতা। সেই সময়েই কাকতালীয় ভাবে শোভনের বিশেষ বান্ধবী বৈশাখীর কাছে ওই চিঠি যাওয়ায় সমস্ত মহলেই বিস্ময় তৈরি হয়েছিল। সোমবারের নয়া নির্দেশিকার ফলে সেই ‘বিড়ম্বনা’ আপাতত এড়ানো গিয়েছে। তবে কেন, কার হস্তক্ষেপে ওই চিঠি পাঠানো হল, সেই ‘রহস্য’ এখনও থেকেই গিয়েছে। সামগ্রিক ভাবে উচ্চশিক্ষা দফতরের এ বিষয়ে কোনও ভূমিকা ছিল, না কি কারও ‘ব্যক্তিগত’ উদ্যোগে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর এখনও পর্যন্ত মেলেনি। এখন দেখার, উচ্চশিক্ষা দফতর বিষয়টি বিশদ খতিয়ে দেখে এবং আইনি পরামর্শ নিয়ে কী পদক্ষেপ করে।
বেনিয়াপুকুর এলাকার মিল্লি আল আমিন কলেজে বৈশাখী শুধু সহকারী অধ্যাপিকা ছিলেন না, তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা আর্থিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকও (ডিডিও) ছিলেন। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈশাখী প্রথম বার ইস্তফা দেন। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালন সমিতির কাছেই তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কথা। কিন্তু সে সময়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হিসাবে ওই কলেজ সামলাচ্ছিল অস্থায়ী পরিচালন সমিতি। তাই বৈশাখী সরাসরি রাজ্যের শিক্ষাসচিবকেই ইস্তফাপত্র পাঠান। তার প্রতিলিপি দেন অস্থায়ী পরিচালন সমিতিকে। বৈশাখীর সেই ইস্তফা পরিচালন সমিতি গ্রহণ করে নিয়েছিল। কিন্তু সে বছরের ১৮ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দেয়, বৈশাখীর ইস্তফা গ্রহণ করার এক্তিয়ার অস্থায়ী পরিচালন সমিতির নেই। ফলে তিনি মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা ডিডিও পদেই বহাল থাকেন। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর বৈশাখীকে বদলি করা হয় রামমোহন রায় কলেজে। কিন্তু সে কলেজে তিনি কাজে যোগ দেননি। উচ্চশিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখে তিনি ফের ইস্তফা দিয়ে দেন।
গত ১৬ অগস্ট উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে যে চিঠি বৈশাখীর বাড়িতে পৌঁছোয়, তাতে লেখা ছিল, পুরনো নির্দেশগুলি বাতিল করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই কাজ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ, শেষ এক বছর বৈশাখী যে বেতন নিয়েছিলেন, তা তাঁর ‘প্রাপ্য’ নয়। ওই সময়কালে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা ডিডিও হিসাবে তিনি যে সব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারও কোনও বৈধতা নেই। সে ক্ষেত্রে বৈশাখীকে এক বছরের বেতন ফেরত দিতে হত। শেষ এক বছরে তাঁর সিদ্ধান্তে যে সব খরচ হয়েছিল, তাও ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’ হিসাবে গণ্য হত।
বৈশাখী জানান, ২২ অগস্ট উচ্চশিক্ষা দফতরে ই-মেল করে তিনি ওই নির্দেশ সংশোধনের আর্জি জানিয়েছিলেন। নির্দেশ সংশোধিত না হলে তাঁকে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে বলেও তিনি আনন্দবাজার ডট কম-কে জানিয়েছিলেন। অন্য দিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘‘আমি এমন কোনও চিঠির বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ তার পরেই সোমবার নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।