সময়ের কাজ সময়ে সেরে রাজ্যে প্রথম হিজুলি পঞ্চায়েত

আগের বার একটুর জন্যে ফস্কে গিয়েছিল রাজ্যের সেরার শিরোপা। ‘সেকেন্ড বয়’ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এ বার সেই সুযোগ আর হাতছাড়া হয়নি। নিজের এলাকার উন্নয়নের খতিয়ান দেখিয়ে জাতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে আনল রঘুনাথপুরের হিজুলি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। শুধু তাই নয়, রাজ্যের সেরা পঞ্চায়েতের তকমাও পেয়েছে ওই পঞ্চায়েত। নদিয়ায় একমাত্র পঞ্চায়েত যারা ওই পুরস্কার পেল।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:২২
Share:

আগের বার একটুর জন্যে ফস্কে গিয়েছিল রাজ্যের সেরার শিরোপা। ‘সেকেন্ড বয়’ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এ বার সেই সুযোগ আর হাতছাড়া হয়নি। নিজের এলাকার উন্নয়নের খতিয়ান দেখিয়ে জাতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে আনল রঘুনাথপুরের হিজুলি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। শুধু তাই নয়, রাজ্যের সেরা পঞ্চায়েতের তকমাও পেয়েছে ওই পঞ্চায়েত। নদিয়ায় একমাত্র পঞ্চায়েত যারা ওই পুরস্কার পেল।

Advertisement

সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিহাল চাঁদ ও রাষ্ট্রমন্ত্রী বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহের উপস্থিতিতে ‘স্ব-শক্তিকরণ পুরস্কার’ তুলে দেওয়া হয় ওই পঞ্চায়েতের প্রধান জিনি কর্মকার ও উপ-প্রধান মীরা সাহার হাতে। মানপত্র ছাড়াও এলাকার উন্নয়নের জন্যে ১৫ লক্ষ টাকার আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ওই পঞ্চায়েতকে। পুরস্কার পেয়ে খুশি পঞ্চায়েতের সদস্য, কর্মীরা। সচিব শান্তনু দত্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি দল পঞ্চায়েতের কাজকর্ম খতিয়ে দেখেছে। মুখে কিছু না বললেও তাঁরা যে আমাদের কাজে খুশি হয়েছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল।’’

কী করে মিলল পুরস্কার?

Advertisement

পঞ্চায়েতের সহায়ক সব্যসাচী সরকার জানান, কাজ খতিয়ে দেখতে পঞ্চায়েত দফতর প্রতিটি প়ঞ্চায়েতকে একটি করে বই পাঠায়। সেখানে লেখা আছে কী পরিমাণ কাজ হলে কত নম্বর পাওয়া যায়। যেমন, পঞ্চায়েতের সভা নিয়মিত হয় কি না, সেই সভায় মহিলা সদস্যদের উপস্থিতির হার কেমন, একশো দিনে কাজ সঠিক ভাবে হয়েছে কি না, সেই ক্ষেত্রে মহিলাদের যোগদানের হার কেমন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কাজ কতটা হয়েছে, কী ভাবে হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় কাজ কী ভাবে হয়েছে প্রভৃতি বিষয়ের উপর নম্বর নির্দিষ্ট করা রয়েছে। পঞ্চায়েতের কাজ অনুযায়ী সেই বইতে নম্বর বসিয়ে দেখা যায় তারা ২০০ মধ্যে ১৯৮ নম্বর পাচ্ছেন। সেই বই ব্লক অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন দফতর ঘুরে সেই বই রাজ্যস্তরে পৌঁছয়। তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে রাজ্যস্তরের এক প্রতিনিধি দল পঞ্চায়েতের কাজ পরিদর্শনে যায়। সব খুঁটিয়ে দেখে তাঁরা ২০০ নম্বরের মধ্যে ওই পঞ্চায়েতকে দেয় ১৯৪ নম্বর। তারপর রাজ্য তাদের কাজের খতিয়ান কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠায়। কেন্দ্র থেকেও একটি প্রতিনিধি দল আসে। তারা কোনও নম্বর না দিলেও পঞ্চায়েতের কাজকর্মে যে খুশি হয়েছিল তার প্রমাণ ওই পুরস্কার।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৭ আসন বিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েতে ১৫টিতে তৃণমূল এবং দু’টো আসনে সিপিএম জিতেছিল। প্রথমবার জয়ী হয়ে প্রধান হয়েছিলেন তৃণমূলের জিনিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবর ছিল। সমস্যাও অনেক ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য এবং পঞ্চায়েতের কর্মীদের সহযোগিতায় কোনও বাধাই আর বাধা হয়ে ওঠেনি।’’ পঞ্চায়েতের সহায়ক সব্যসাচী সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যে ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এই পুরস্কার পেয়েছে। তার মধ্যে আমরা জেলায় একমাত্র ও রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছি। গতবার দ্বিতীয় হয়েছিলাম।’’

পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে থাকলেও পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশি স্থানীয় সিপিএম নেতারা। প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মনোহর দাস বলেন, ‘‘সব দলের সদস্যেরা একত্রিত হওয়ায় সময় মতো পঞ্চায়েতের কাজ শেষ করা গিয়েছে। এলাকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা ঠিক সময়ে খরচ করা সম্ভব হয়েছে। সে কারণে এই পুরস্কার মিলেছে।’’ রানাঘাট-২ ব্লকের বিডিও সায়ন্তন ভট্টাচার্য জানালেন, দিল্লি থেকে একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসে। তারা কাজকর্মে খুশি হয়ে পুরস্কারের জন্য পঞ্চায়েতের নাম ঘোষণা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন