ধর্মতলায় সভা ধর্ম বদলের, সঙ্গে গুন্ডামি

ঘটনায় প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতে গ্রেফতার করা হয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তপন ঘোষকেও। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন অযোগ্য ৩০৭ ধারায় হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

Advertisement

কলকাতা

নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

গেরুয়া-ত্রাস: হিন্দু সংহতির সমাবেশ মঞ্চের সামনে সমর্থকদের উল্লাস।

‘ঘরওয়াপসি’র রাজনীতি এ বার হানা দিল কলকাতাতেও। হিন্দু সংহতি নামে এক সংগঠনের গুন্ডামির মধ্যে দিয়ে।

Advertisement

বুধবার বিকেলে ধর্মতলার বুকে একটি পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে মঞ্চে হাজির করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার দাবি করে ওই সংগঠন। সংবাদমাধ্যম সেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে হিন্দু সংহতির ‘গুন্ডারা’ হামলা চালায়। আহত হন বেশ কয়েক জন সাংবাদিক।

ওই ঘটনায় প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতে গ্রেফতার করা হয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তপন ঘোষকেও। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন অযোগ্য ৩০৭ ধারায় হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে হুসেন আলি নামে যে ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা মঞ্চে উঠে ‘হিন্দু’ হওয়ার দাবি করেছেন, ঘটনার পর তাঁদের আর কোনও হদিস নেই। পুলিশ তাঁদের খোঁজ করছে বলে লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রতি বছরই এ দিনটায় ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সভা করে তারা। গত বছরও সভা থেকে ফেরার পথে কামালগাজি, সোনারপুর, বারুইপুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে হিন্দু সংহতি সদস্যদের মারামারি হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সভা শেষ, একটু ফুর্তি করব না!

এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। সভায় আসার সময়ে উলুবেড়িয়া ও দক্ষিণ কলকাতার একটি জায়গায় গোলমাল বাধে।

সাংবাদিকদের উপরে হামলা সংহতির ‘যোদ্ধাদের’। বুধবার ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সংগঠনের সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আমাদের সংগঠনে কেউ সদস্য বা সমর্থক নয়। সকলেই হিন্দু যোদ্ধা।’’ সেই যোদ্ধারা যে আদতে ‘গুন্ডা’, তা এ দিনের ঘটনাতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ঘটা করে ‘হিন্দু’ হওয়া পরিবারটির নাম ঠিকানা জানাতে চায়নি ওই সংগঠন। সং‌বাদমাধ্যমের মনে প্রশ্ন ছিল, সত্যিই কি স্বেচ্ছায় এঁরা ধর্মত্যাগ করেছেন? না কি অর্থ বা অন্য কোনও কারণে বাধ্য হয়েছেন? সাংবাদিকরা সেই প্রশ্ন করতেই সংগঠনের যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েন সাংবাদিকদের উপর। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়।

‘যোদ্ধাদের’ হামলার সময়ে কিন্তু নিষ্ক্রিয়ই ছিল উপস্থিত পুলিশবাহিনী। গোলমালের পরে পুলিশ কর্তারা আহত সাংবাদিকদের খোঁজ করতে আসেন। প্রকাশ্যে ধর্মান্তকরণের খবর পুলিশের কাছে ছিল কি না, পুলিশ কেন এমন অনুষ্ঠান চালাতে দিল, সংশ্লিষ্ট পরিবারটির ঠিকানা কী— ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যুগ্ম-কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার ব্যস্ত থাকার কথা বলে ফোন কেটে দেন।

যদিও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নিন্দার ভাষা নেই। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যা শুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘হিন্দু সংহতি তৃণমূলের মদতে চলে। তাই মোহন ভাগবত, অমিত শাহের সভার অনুমতি না দেওয়া হলেও হিন্দু সংহতিকে সভা করতে দেওয়া হয়। তবে এ দিন একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলায় পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন