West Bengal

বুদ্ধের সিঙ্গুর অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল, সুপ্রিম রায়ে ঐতিহাসিক জয় মমতার

সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক জয় পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর মামলার রায় ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, ২০০৬ সালের জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ। বিচারপতি গোপাল গৌড়া এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার নির্দেশ দিল, আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে অধিগৃহীত জমি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ১৪:৩০
Share:

শেষ হাসি মমতাই হাসলেন।

সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক জয় পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর মামলার রায় ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, ২০০৬ সালের জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ। বিচারপতি গোপাল গৌড়া এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার নির্দেশ দিল, আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে অধিগৃহীত জমি।

Advertisement

দীর্ঘ ১০ বছর পর সিঙ্গুর মামলার নিষ্পত্তি হল। ২০০৬ সালে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা গড়তে সিঙ্গুরে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কৃষকের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে বাংলার রাজনীতি কী ভাবে নতুন বাঁক নিয়েছে, সে ইতিহাস কারও অজানা নয়। ক্ষমতায় আসার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আইন পাশ করান রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু সে আইনকে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানা টাটা গোষ্ঠী। লড়াই গিয়ে শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে। ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণ হওয়ার ১০ বছর পর বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ঘোষণা করল, বামফ্রন্ট সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়া সেই অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল। সে সময় দেশে যে জমি আইন কার্যকর ছিল, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার জমি অধিগ্রহণের সময় সেই আইন মানেনি বলে সুপ্রিম কোর্ট মত প্রকাশ করেছে। আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গুরের কৃষকদের হাতে জমির মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন নির্দেশ দিয়েছে।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৬। উত্তাল সিঙ্গুর। পুলিশের মারে আক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। —ফাইল চিত্র।

Advertisement

সিঙ্গুরে অধিগৃহীত জমি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু আইনি জটিলতার কথা বিচারপতিদের সামনে তুলে ধরেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর কৌঁসুলি। সর্বোচ্চ আদালত তারও সুরাহা করেছে। যে সব কৃষকরা জমি দিতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের যদি জমি ফেরত দেওয়া হয়, তা হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কি আদায় করা যাবে? প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন, তাঁদের জমিও পেরত দিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য সরকারকে তাঁরা ফেরত দেবেন না। কারণ গত ১০ বছর জমি তাঁরা ভোগ করেননি। জমি দেওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা তাঁরা নিয়েছিলেন, তাকে গত ১০ বছর জমি ভোগ করতে না পারার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই দেখা হবে। যে অনিচ্ছুক কৃষকরা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা সে সময় নেননি, এ বার জমির সঙ্গে তাঁদের সেই ক্ষতিপূরণের টাকাও দিতে হবে। রাজ্য সরকারকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাভাবিক ভাবেই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ২ সেপ্টেম্বর গোটা রাজ্যে সিঙ্গুর উৎসব পালনের ডাক দিয়েছেন তিনি। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনকারীদের মধ্যেও খুশির জোয়ার। সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসতেই সেখানে শুরু হয়ে গিয়েছে আবির খেলা, মিষ্টিমুখ।

আরও খবর- সিঙ্গুর: জমি বিবাদের দলিল

আরও খবর- ফিরে দেখা সিঙ্গুর লড়াই...

আরও খবর- সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর রায়ের মূল ১০ কথা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন