বসন্তোৎসবের ভিড়ে ৩ ঘণ্টা থমকে বোলপুর

বসন্তোৎসব ঘিরে অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলা দেখল শান্তিনিকেতন। বৃহস্পতিবার, উৎসবের দিন যানজটে প্রায় তিন ঘণ্টা থমকে রইল বোলপুর শহর।

Advertisement

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:২১
Share:

অবরুদ্ধ বোলপুর। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

বসন্তোৎসব ঘিরে অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলা দেখল শান্তিনিকেতন। বৃহস্পতিবার, উৎসবের দিন যানজটে প্রায় তিন ঘণ্টা থমকে রইল বোলপুর শহর। অনেক বয়স্ক মানুষ জ্ঞান হারালেন। হাত-পা কেটে রক্ত ঝরল অনেকের। স্থানীয়েরা দুষলেন পর্যটকদের। পর্যটকেরা দুষলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ-প্রশাসনকে। নিজেদের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার কথা লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব হলেন অনেকেই। এমন চলতে থাকলে যে অচিরেই শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবের ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে, সেই আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশ্ন উঠেছে, এ কোন শান্তিনিকেতন?

Advertisement

কেন এই বিশৃঙ্খলা, তার কারণ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে উঠেছে লাগামছাড়া ভিড়। এবং ভোর থেকেই শহরে ঢুকতে থাকা পরের পর গাড়ি এবং বাস। এর দোসর পর্যটকদের একাংশের ‘দাপাদাপি’।

বৃহস্পতিবার আশ্রমমাঠে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই অনেকে আবির খেলতে শুরু করেন। শোভাযাত্রার ছবি তুলবেন বলে সাউন্ড বক্সের মাথায় উঠতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময় পরে ব্যারিকেড টপকে পর্যটকেরা আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সংরক্ষিত জায়গায় চলে আসতে শুরু করেন। মঞ্চ থেকে নিষেধ করা হলেও কেউ কানে তোলেনি। অনুষ্ঠান শেষ হতেই আশ্রমমাঠের ভিড় ছড়িয়ে পড়ে আশ্রমের বিভিন্ন অংশে। সেই সময় থেকেই এক দল লোক অভদ্র ব্যবহার শুরু করেন বলে অভিযোগ। কলকাতা থেকে রবীন্দ্র অনুরাগী অনিন্দিতা মিত্র এসেছিলেন বেশ কয়েক বছর পরে। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘একটা সময়ের পর দেখলাম, জনস্রোত ধেয়ে আসছে। কানে এল মহিলাদের প্রতি অশ্রাব্য ভাষা। মদ্যপ অবস্থায় কিছু লোকজনের অভব্যতাও দেখলাম।’’ জোর করে আবির মাখাতে গিয়ে টানা হ্যাঁচড়ায় কয়েক জন মহিলার শাড়ি ছিঁড়ে যায়। সেই সময় আরও বেশি পুলিশি তৎপরতা দরকার ছিল বলে মনে করছেন পর্যটকেরা।

Advertisement

আশ্রমমাঠের বাইরের অবস্থা দুপুরের পরে আরও শোচনীয় হয়। ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত শান্তিনিকেতন রোডে হওয়া যানজটে আটকে পড়ে গোটা শহর। হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। ১০ মিনিটের রাস্তা হেঁটে যেতে দু’ঘণ্টা সময় লেগেছে। চড়া রোদে একটা সময় বোতলবন্দি জলও অগ্নিমূল্য হয়ে যায়। এক লিটার জল বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকায়। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী জানালেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রত্যেক দোকান থেকে হাজার খানেক জলের বোতল, ঠান্ডা পানীয় বিক্রি হয়ে যায়। জল না পেয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

যদিও কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি বলে স্বস্তির শ্বাস ফেলছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের কথায়, ‘‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে টানা ছুটি থাকায় অপ্রত্যাশিত ভিড় হয়েছিল। যা গত সাত-আট বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সে কারণেই যানজট হয়েছে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘সকালে দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠান দেখতে যে এই পরিমাণ ভিড় হবে, আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত, বসন্তোৎবের আয়োজন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষ করে ভিড় নিয়ন্ত্রণে। অনির্বাণবাবুও বলছেন, ‘‘আগামী বছর যাতে সুষ্ঠু ভাবে বসন্তোৎসব করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন