রাজনাথের বদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অমিত, বড় চাপ হয়ে গেল মমতার

রাজ্য থেকে মন্ত্রী যাঁরাই হোন, কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসে থাকছেন অমিত শাহ। যদি ‘চাপ’ বলে কিছু থাকে, তা হলে এটাই এ রাজ্যের পক্ষে আপাতত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

Advertisement

দেবাশিস ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

অমিত শাহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিরোধিতা এক চরম জায়গায় পৌঁছেছে। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যে বিজেপির লোকসভা ফলকে যদি এক কথায় চমকপ্রদ বলতে হয়, তবে নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় বাংলার অবস্থানেও চমক বড় কম নয়। তফাত একটাই। প্রথমটি বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহে জোয়ার তুলেছিল। পরেরটিতে এল খানিকটা আশাভঙ্গের বেদনা!

Advertisement

তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব-প্রতিপত্তির মোকাবিলা করে ১৮টি আসন জেতার পরেও মোদী-মন্ত্রিসভায় এ রাজ্যের বরাতে আগের বারের মতো দু’টি প্রতিমন্ত্রী ছাড়া কিছু জোটেনি। তাঁদের দায়িত্বও উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। পুরনো মুখ বাবুল সুপ্রিয় এ বার পেয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর পদ। নবাগত প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর হাতে নারী ও শিশুকল্যাণ।

অনেক ‘দেওয়া’র পরে এই একটুখানি ‘পাওয়া’ যে তাঁদের খুশি করেনি, কলকাতায় ফেরার আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তা জানিয়ে এসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বয়ং। বস্তুত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বঙ্গের গুরুত্ব যে এ বার বাড়বে, ফল দেখার পরে এ নিয়ে বিশেষ সংশয় প্রায় কারও ছিল না। জল্পনা যা ছিল তা নাম নিয়ে। গুরুত্ব বৃদ্ধি দূরস্থান, একটি পূর্ণ মন্ত্রিত্বও যে থাকবে না, সেই ‘ধাক্কা’ আসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

Advertisement

যে দুই মন্ত্রকের আধা-ভার বাবুল এবং দেবশ্রীর হাতে এল, তাতে সরাসরি জনসংযোগের সুযোগ খুব একটা নেই। ফলে মন্ত্রিত্ব করে মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ার ‘রাজনীতি’ এঁদের দিয়ে করা যাবে না। তাঁরা বাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরবেন, আগে পিছনে পুলিশ পাবেন। কিন্তু রাজ্যে আমলা-পুলিশদের ‘তাঁবে’ রাখার মতো দাপুটে মন্ত্রী এঁরা হয়ে উঠতে পারবেন, সে সম্ভাবনা কম। অথচ ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের নিরিখে বিজেপির পক্ষে এটা জরুরি ছিল না, তা বলা চলে না। আপাতত সেই সম্ভাবনা হয়তো কিছুটা কমল।

তা বলে এটা কি রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে কোনও ‘স্বস্তি’র বিষয়? বোধ হয় জোর দিয়ে সেটাও বলা যাবে না। কারণ, রাজ্য থেকে মন্ত্রী যাঁরাই হোন, কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসে থাকছেন অমিত শাহ। যদি ‘চাপ’ বলে কিছু থাকে, তা হলে এটাই এ রাজ্যের পক্ষে আপাতত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকা নানা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাজ্যকে প্যাঁচে ফেলার মতো বিবিধ প্রকরণও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে রয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন, বিভিন্ন ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি পর্যালোচনা, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে চাপ দেওয়া, সর্বোপরি নিয়মিত রাজ্যপালের রিপোর্ট দেখা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা, এ সবই নর্থ ব্লকে শাহের কাজের মধ্যে পড়বে। অনেকে এমনও বলে থাকেন, দেশের রাজভবনগুলির ‘রিমোট কন্ট্রোল’ নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে!

এর আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মমতার ‘সুসম্পর্ক’ গোপন ছিল না। এমনকি, মোদীর বিকল্প হিসেবে রাজনাথকে তাঁর পছন্দ বলেও একাধিকবার জানিয়েছেন মমতা। রাজনৈতিক মহলে এমন একটি ধারণাও তৈরি হয়েছিল যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাজনাথ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি বহু ক্ষেত্রে ‘নরম’ মনোভাব নিয়েছেন।

কিন্তু শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পরে রসায়নটা যে এ বার আমূল বদলে যাবে, সেটাই যুক্তিগ্রাহ্য। এখনও পর্যন্ত তার অন্যথা হওয়ার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না। আর সবাই জানেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি তো বটেই, বিশ্বস্ততম সহযোগী হিসেবেও অমিত শাহ অবিসংবাদী নাম। তা-ই এটা বলা যেতেই পারে যে, নর্থ ব্লকে বসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা করবেন, সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে সহমত হবেন।

শাহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক তো নেই-ই, রাজনৈতিক ভাবেও তাঁদের মধ্যে বিরোধিতা এক চরম জায়গায় পৌঁছেছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা দিতে রাজি নন। বিজেপি সভাপতি হিসেবে শাহ গোড়া থেকেই মমতাকে যত দ্রুত সম্ভব পর্যুদস্ত করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। রাজ্যে মমতা সরকারের অবসান ঘটানো তাঁর ঘোষিত শপথ।

এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও সেই কাজে শাহ যত দূর সম্ভব ‘কার্যকর’ ভূমিকা নেবেন, তা অনুমান করা যায়। মমতার পক্ষে এটাই বড় চাপ। রাজ্য থেকে বিজেপির কারা কী মন্ত্রী হলেন এই ‘চাপে’র কাছে তা নিতান্তই গৌণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন