রক্ত দিতে প্রস্তুত ঘোড়ারা, তবু সাপে কাটার ওষুধ পেতে ভরসা সেই গুজরাত

স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, রাজ্যে সাপে-কাটার ওষুধের অভাব মেটাতে এখন প্রতিষেধক আসে মূলত গুজরাত থেকেই। কিন্তু সরবরাহ খুব কম। তবু বেঙ্গল কেমিক্যালে ওষুধ তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন উঠেছে বারবার।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share:

রক্ত দিতে প্রস্তুত ঘোড়া, তবু অমিল সাপের ওষুধ

মনসামঙ্গলের বাংলায় ফি-বছর সাপের ছোবলে অনেক প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এ রাজ্যে সাপে-কাটার ওষুধের বড্ড টানাটানি। গুজরাত থেকে কখন ওষুধ আসবে, পথ চেয়ে বসে থাকতে হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনকে।

Advertisement

অথচ মানিকতলায় বেঙ্গল কেমিক্যালের আস্তাবলে খেয়ে-ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছে ৩০টি ঘোড়া। এক সময়ে তাদের রক্ত থেকে সর্পদংশনের প্রতিষেধক তৈরি হতো কলকাতাতেই। এখন আর হয় না। বেঙ্গল কেমিক্যালের খবর, তাদের সংস্থায় ২০০৫ সালে শেষ বার ৫১ হাজারেরও বেশি অ্যান্টিভেনাম সিরামের ভায়াল তৈরি হয়েছিল। পরিকাঠামোর অভাবে ২০০৬-’০৭ অর্থবর্ষে বন্ধ হয়ে যায় ওষুধ তৈরির কাজ। তখন থেকে ঘোড়াগুলিও বেকার। অর্থসঙ্কটের মধ্যেও দানাপানি দিয়ে পুষে যেতে হচ্ছে তাদের।

স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, রাজ্যে সাপে-কাটার ওষুধের অভাব মেটাতে এখন প্রতিষেধক আসে মূলত গুজরাত থেকেই। কিন্তু সরবরাহ খুব কম। তবু বেঙ্গল কেমিক্যালে ওষুধ তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন উঠেছে বারবার। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী-প্রাচীন এই সংস্থা বর্তমানে কেন্দ্রের সার ও রসায়ন মন্ত্রকের অধীন। তাই সিরাম তৈরির ব্যাপারে কেন্দ্রে লাগাতার দরবার চলছে। রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়ও কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রীকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জনিয়েছেন। কাজ হয়নি।

Advertisement

সিরাম তৈরি বন্ধ কেন? বেঙ্গল কেমিক্যালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম পি চন্দ্রাইয়া জানান, ২০০৫ সাল পর্যন্ত সিরাম তৈরির কাজ ঠিকঠাকই চলছিল। তার পরে কেন্দ্রীয় ভেষজ দফতর থেকে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে গুড ম্যানফ্যাকচারিং প্র্যাক্টিস (জিএমপি) পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে সংস্থার পুরনো যন্ত্রপাতি বাতিল হয়ে যায়। কারখানার পরিবেশ আমূল বদলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তৈরি হয় ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প রিপোর্ট। কেন্দ্র ১৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। মানিকতলার কারখানায় জায়গা বাড়িয়ে কাজও শুরু হয়ে যায়। তার পরেই পাশের একটি সংস্থার সঙ্গে জমি নিয়ে শুরু হয় মামলা-মকদ্দমা। আটকে যায় নতুন প্রকল্পের কাজ।

সংস্থার কর্মীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ২০১৩ সালে সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। তা হলে সিরাম তৈরির কাজ ফের শুরু করা যায়নি কেন? বেঙ্গল কেমিক্যালের কর্তাদের বক্তব্য, মামলা চলাকালীন সংস্থার উৎপাদন-কাঠামো ভেঙে পড়ে। লোকসান চলতে থাকে। শুরু হয়ে যায় শ্রমিক-অসন্তোষও। কারখানার ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকেও।

‘‘আমরা এখনও আশাবাদী। সংস্থা এ বার কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে। তবে সব কিছু নতুন করে শুরু করার জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে,’’ বললেন চন্দ্রাইয়া। তিনি জানান, এখনকার ঘোড়াগুলিকে দিয়ে কাজ হবে না। ফের সিরাম উৎপাদন শুরু করতে হলে আনতে হবে তেজী ঘোড়া। কেন্দ্রের কাছ থেকে উৎপাদন শুরু করার সবুজ সঙ্কেত এখনও আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement