বন্ধ সামলাতে পাহাড়ে গিয়ে বিপাকে পড়লেন ২০ জন মহিলা কনস্টেবল। কার্শিয়াঙের একটি হোটেলে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ব্যবস্থা করে দেয় ব্যাঙ্কোয়েট হলে। ওই মহিলা পুলিশকর্মীরা পরে অভিযোগ করেন, সেই ঘরটিতে যে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ছিল, তাতে তাঁদের পোশাক বদলের দৃশ্য দেখেছেন কয়েক জন হোটেলকর্মী।
বুধবার বন্ধের দিন সকালে বিষয়টি নিয়ে কার্শিয়াং থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। দুটি বড় ‘ওয়াশ রুম’ থাকলেও সেখানে না গিয়ে কেন ওই মহিলারা হলঘরে পোশাক পাল্টেছেন— সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কয়েক জন হোটেলকর্মী। তাতেই থানায় অভিযোগ জমা দিতে গিয়ে সদ্য পুলিশে যোগ দেওয়া কয়েক জন তরুণী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শীর্ষ অফিসারেরা অনেক কষ্টে তাঁদের ক্ষোভ সামাল দেন।
ঘটনাচক্রে, তখন বন্ধ সামাল দিতে কার্শিয়াং সদরেই ছিলেন মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি জয়ন্ত পাল, এলাকার এসডিপিও-সহ বেশ কয়েক জন পদস্থ অফিসার। সকলেই অভিযোগ শুনে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। ওই রাতেই হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার (ডিভিআর) বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবারও হোটেলের কর্মচারী, মালিকপক্ষের প্রতিনিধিকে কয়েক দফা জেরা করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ডিভিআর’টি অকেজো থাকায় কিছুই রেকর্ড হয়নি। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা কী উদ্দেশ্যে, কেন চালানো ছিল— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের এডিজি উত্তরবঙ্গ এন রমেশবাবু অবশ্য বিশদে মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, ‘‘পুলিশ সব খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে।’’
কার্শিয়াং স্টেশনের অদূরে এই হোটেলটির বিরুদ্ধে আগে কখনও এমন অভিযোগ ওঠেনি। পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, বরং, নানা সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে হঠাৎ এই পাহাড়ি শহরে বড় বাহিনী এলে ওই হোটেলটির তরফে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। বন্ধের আগের দিন, মঙ্গলবার কোথাও ঘর না পাওয়ায় ওই মহিলা কনস্টেবলদের হোটেলটির ব্যাঙ্কোয়েট হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রকাশ্যেই দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, মঙ্গলবার রাতে সেগুলি বন্ধই ছিল। মালিকপক্ষের এক প্রতিনিধি জানান, রাতে হোটেলের ভেতরে-বাইরে সব সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফের সকালে তা চালু করেন এক কর্মী। তিনি জানান, একেবারেই অনভিজ্ঞ এক কর্মী কিছু না বুঝেই সকালে হোটেলের বাইরের ও হলঘরের সিসিটিভি ক্যামেরা চালু করে দেন। কয়েক জন মহিলা কনস্টেবলের হঠাৎই সন্দেহ হয়। তখন তাঁরা নেজারের ঘরে গিয়ে হইচই করেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা বন্ধ করা হয়। মালিকপক্ষের দাবি, তাঁদের ক্যামেরা চালু হলেও কিছু রেকর্ড হয়নি। কারণ, ‘ডিভিআর’ খারাপ।
পুলিশের একটি অংশ প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে মহিলা পুলিশকর্মীরা রয়েছেন, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা পুরোপুরি ‘অফ’ করা হয়নি কেন? হোটেল মালিক বলেন, ‘‘একেবারেই অনভিজ্ঞ একটি ছেলে ক্যামেরা ‘অন’ করে দিলেও খবর পেয়েই তা বন্ধ করা হয়েছে। পরে মহিলা কনস্টেবলদের জন্য কয়েকটি ঘরও বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখলেই বুঝবেন, আমাদের কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।’’