খাগড়াগড়ে চুক্তি ছাড়া বাড়ি ভাড়া জঙ্গিদের

তখন ভাড়াটেরা জানায়, সামনে ইদ। দেশের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে তারা চুক্তি করবে। আদালতে বাড়িওয়ালার বক্তব্য, তিনি তাদের জানিয়েছিলেন, চুক্তি সইয়ের পরেই ভাড়া নেবেন। লিখিত চুক্তি না-হলে তাদের উঠে যেতে হবে। আর বিস্ফোরণ হয় তার পরের দিনই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৪৬
Share:

তারা এসেছিল পোশাকের কারিগরের ভেক ধরে। এবং খাগড়াগড়ের সেই বাড়ির দোতলায় থাকার জন্য কোনও লিখিত চুক্তিও করেনি জঙ্গিরা। মাসিক ৪২০০ টাকায় ভাড়ায় তারা চার মাস সেই বাড়িতে ছিল। বুধবার খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় সাক্ষ্য দিতে উঠে বাড়িওয়ালা বিচারককে এ কথা জানান বলে কলকাতার এনআইএ আদালত সূত্রের খবর।

Advertisement

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ওই বাড়িতে বিস্ফোরণ হয় ২০১৪-র ২ অক্টোবর। আদালত সূত্রের খবর, বাড়িওয়ালা জানান, শাকিল গাজি ও কওসর নামে দু’জন তাঁর বাড়ির দোতলা ভাড়া নেয় ওই বছরের ২ জুন থেকে। বিস্ফোরণে শাকিল প্রাণ হারায়। কওসর এখনও পলাতক।

বাড়িওয়ালা এ দিন আদালতে জানান, খাগড়াগড়ের এক বাসিন্দা ২০১৪-র মে মাসের শেষ দিকে শাকিল ও কওসরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন। কওসর থাকত না, তবে সে যাতায়াত করত। দু’জনেই জানিয়েছিল, তারা বাড়ির দোতলায় সপরিবার বসবাস করবে এবং বোরখা ও নাইটি তৈরি করবে। বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যার দরুন গোড়াতেই তিনি ওই ভাড়াটেদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করে উঠতে পারেননি। বাড়িওয়ালার বক্তব্য, কী করে তিনি বু‌ঝবেন যে, ওরা জঙ্গি!

Advertisement

বাড়িওয়ালা এ দিন জানান, ওই ভাড়াটেরা এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়েছিল। তবে ১ অক্টোবর তারা ভাড়া দিতে এলে বাড়িওয়ালা নেননি। তিনি তাদের পরিষ্কার বলেছিলেন, আগে দু’পক্ষের মধ্যে ১১ মাসের চুক্তি হোক। তার পরে তিনি ভাড়া নেবেন। তখন ভাড়াটেরা জানায়, সামনে ইদ। দেশের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে তারা চুক্তি করবে। আদালতে বাড়িওয়ালার বক্তব্য, তিনি তাদের জানিয়েছিলেন, চুক্তি সইয়ের পরেই ভাড়া নেবেন। লিখিত চুক্তি না-হলে তাদের উঠে যেতে হবে। আর বিস্ফোরণ হয় তার পরের দিনই।

এনআইএ আদালতে বাড়িওয়ালা এ দিন আরও জানান, তিনি তখন লাগোয়া বাড়ির একতলার বারান্দায় বসে ছিলেন। সেই বাড়িটিও তাঁর। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি ছুটে যান। পড়শিরাও জড়ো হন। বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া কিছু পোড়া কাগজ, লোহা ও কাঠের টুকরো, জিনিসপত্র এবং ঘটনার পরের দিন বাজেয়াপ্ত হওয়া একটি মোটরবাইক এ দিন শনাক্ত করেন বাড়িওয়ালা।

এ দিন এনআইএ-র পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে, সাক্ষ্যগ্রহণের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, এতে সাক্ষীদের নিরাপত্তার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাই তাদের আর্জি, বিচারক এই ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশ জারি করুন। অভিযুক্ত পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মহম্মদ আবু সেলিম অবশ্য জানান, এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং সাংবিধানিক অধিকার হরণের চেষ্টা। তাঁর মতে, সংবাদমাধ্যম সাক্ষীদের নাম আগাম প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকলেই কাজ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন