Ration Distribution Case

রেশন থেকে কত আটা সরাতেন বাকিবুররা? টাকা আসত কী ভাবে? ম্যারাথন জেরার উত্তর নিয়ে ধন্দে ইডি

বাংলায় রেশন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে এসে রাজ্যের ‘মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছিলেন ইডির তদন্তকারীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫০
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং তাঁর আপ্তসহায়কের বাড়িতে শুরু হয়েছে তল্লাশি। যে মামলায় জড়িয়েছে ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ বাকিবুর রহমনের নামও। কী ভাবে আটা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটা ধারণা মিলেছে ইডির নথি থেকে। বৃহস্পতিবারে জ্যোতিপ্রিয়দের জেরার নেপথ্যেও সেই নথির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

কী ভাবে চলত দুর্নীতি? ইডির নথিতে বলা হয়েছে, মিল মালিকেরা সরকারি অর্থ মিলিয়ে নিতেন কড়ায়-গণ্ডায়। কিন্তু তার বিনিময়ে সরবরাহকৃত রেশনের হিসাব মিলত না। প্রতি ১ কেজি আটার দামে অন্তত ২০০ গ্রাম কম আটা দিতেন আটা কলের মালিকেরা। বাংলার রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে।

চাল এবং আটা কলের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ইডি জানতে পেরেছে এই তথ্য। তাঁরাই জানিয়েছেন কমিয়ে নেওয়া আটার পরিমাণ কখনও কখনও ৪০০ গ্রামও হত। অর্থাৎ ১ কেজি আটার মূল্যে সরকারি সরবরাহকারীরা হাতে পেতেন ৬০০ গ্রাম আটা। তবে এই গরমিলের কথা জানত দু’পক্ষই। পুরোটাই চলত মিল মালিক এবং সরকারি সরবরাহকারীদের বোঝাপড়ায়। সঠিক দামে কম আটা বুঝে নেওয়ার ভাল দাম পেতেন রেশনের সরকারি সরবরাহকারীরা। যদিও বৃহস্পতিবার সকালে বাকিবুর রহমানের কাছে এই তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ধন্ধে পড়েছেন ইডি কর্তারা।

Advertisement

বাংলায় রেশন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে এসে রাজ্যের ‘মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। পরে তাঁর কাছ থেকেই নদিয়ার আটা এবং চালকল মেজার্স এনপিজি রাইস মিল প্রাইভেট লিমিটেডের খোঁজ মেলে। ইডি জানতে পারে, ওই চাল এবং আটাকল সংস্থার ডিরেক্টর বাকিবুরই। এর পরে ওই সংস্থার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে দুর্নীতির রকমফের জানতে পারে ইডি। কিন্তু এই একই তথ্য বাকিবুরের কাছ থেকে যাচাই করতে গিয়ে ইডি কর্তারা দেখেন সরকারি রেশন সরানো নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন বাকিবুর। তবে আটা যে সরানো হত, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ এই ব্যবসায়ীও।

ইডি সূত্রে খবর, বাকিবুর তাদের জানিয়েছেন, আটা সরানো হলেও তা ২০-৪০ শতাংশ হারে হত না। বাকিবুরের কথায় বড়জোর ৫-১০ শতাংশ আটা সরানো হত। অর্থাৎ প্রতি এক কেজিতে বড়জোর ১০০ গ্রাম হারে। রেশনের কয়েকশো কেজি আটা থেকে এ ভাবে আটা সরিয়ে, তা বাজারজাত করে যে অর্থ আসত, সেই ‘লাভের’ টাকা ৮০:২০ অনুপাতে ভাগ হত সরবরাহকারী এবং মিল মালিকদের মধ্যে। বাকিবুরের কথায় তাঁর মতো মিল মালিকেরা পেতেন ওই অর্থের ২০ শতাংশ। আর সিংহ ভাগ অর্থাৎ ৮০ শতাংশ লাভ যেত রেশন সরবরাহকারী এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত অন্য মধ্যস্থতাকারীদের ভাঁড়ারে।

ইডি সূত্রে খবর, তাদের তল্লাশি অভিযানে যে সমস্ত তথ্য হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কোটি কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে সরকারি রেশন সরবরাহকারীদের অ্যাকাউন্টে। ফলে মিলের ম্যানেজার এবং মিল মালিকের সঙ্গে বাকিবুরের বক্তব্য না মেলায় ধন্ধে পড়েছে ইডি।

রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাকিবুর এবং জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুরকে গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছিল জ্যোতিপ্রিয়ের। বৃহস্পতিবার ওই ম্যারাথন তল্লাশি অভিযানের মধ্যেই রেশন দুর্নীতি নিয়ে উঠে আসছে একের পর এক নতুন তথ্য। যে তথ্য এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন