Goghat

মজুরি কত? গ্রামবাসী বললেন, পঞ্চায়েত জানে

‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং’ (এনএলএম) দলের দুই সদস্য আর কে রায় এবং সুকুমারপ্রসাদ সিংহ বুধবার সকালে রঘুবাটী পঞ্চায়েতে যান।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:১০
Share:

পুকুর সংস্কার এবং উপভোক্তাদের বাড়ি দেখছেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা। গোঘাটের রঘুবাটীতে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

১০০ দিনের কাজের মজুরি কত? কী ভাবে পান?

Advertisement

প্রশ্ন শুনে দুই শ্রমিকের জবাব, ‘‘ও সব পঞ্চায়েত জানে।’’ কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল এসে প্রশ্ন করলে কী উত্তর দিতে হবে, আগেভাগে শিখিয়ে দিয়েছিলেন গোঘাট-১ ব্লকের রঘুবাটী পঞ্চায়েতের আধিকারিক এবং শাসক দলের নেতারা। তা সত্ত্বেও ওই দুই গ্রামবাসীর উত্তর তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। অস্বস্তি ঢাকা যায়নি আবাস যোজনা প্রকল্পেও।

‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং’ (এনএলএম) দলের দুই সদস্য আর কে রায় এবং সুকুমারপ্রসাদ সিংহ বুধবার সকালে রঘুবাটী পঞ্চায়েতে যান। নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। ১০ নম্বর সংসদে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের ৫ শ্রমিককে ডেকে মাস্টার রোলে তাঁদের সই পরীক্ষা করেন। তখনই ওই প্রশ্নোত্তর-পর্ব।

Advertisement

এর পরে স্থানীয় শ্যাওড়াগেড়ের আদিবাসীপাড়ায় আবাস যোজনার পাঁচটি বাড়ি পরিদর্শনে যায় কেন্দ্রীয় দল। দেখা যায়, কোনও বাড়িতে শৌচাগার নেই। কোনও বাড়ি রং- প্লাস্টারহীন।

লক্ষ্মী হাঁসদার বাড়িতে শৌচাগার হয়নি। ঘরে প্লাস্টার বা রংও নেই। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় দলের প্রশ্ন শুনে লক্ষ্মীর পুত্রবধূ মালতি নতুন একটি দেওয়াল লিখন দেখান। সেখানে লেখা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’।

রবি হাঁসদা, ভোলানাথ মুর্মু, সুনীল মুর্মুর বাড়িতেও শৌচাগার নেই। কিছুটা দূরে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ প্রকল্পের শৌচাগার দেখিয়ে সুনীল জানান, সবাই সেটিই ব্যবহার করেন। রায়পাড়ায় কানাই রায়ের আবাস প্রকল্পের বাড়িতে একটি পাকা ঘর। বাকিটা মাটির।

কেন এ রকম? উপভোক্তার ব্যাখ্যার আগে এক পঞ্চায়েত কর্মী বোঝানোর চেষ্টা করেন, প্রকল্পে বরাদ্দ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। আর ৯০ জন শ্রমিকের মজুরি বাবদ পেয়েছেন ১৬ হাজার ২০০ টাকা। এই অল্প টাকায় কুলিয়ে উঠতে পারেননি। কেন্দ্রীয় দলটি কংসাবতীর খাল পাড়ে বৃক্ষরোপণ, প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার একটি রাস্তা, পুকুর সংস্কারের কাজও পরখ করেন।

সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ পঞ্চায়েতে পৌঁছে দেখা যায়, আধিকারিক এবং কিছু তৃণমূল নেতা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উপভোক্তাদের শেখাচ্ছেন, ওই দল কী প্রশ্ন করতে পারে, তাতে কী উত্তর দিতে হবে। যেমন, ১০০ দিন প্রকল্পে গত কয়েক বছরের বেতন ২০৪ টাকা, পরে ২১৩ টাকা এবং বর্তমানে ২২৩ টাকা। ওই অঙ্ক কার্যত মুখস্থ করানো হয়। পঞ্চায়েত প্রধান সুষমা সাঁতরার বক্তব্য, ‘‘অনেক মানুষ অনেক কিছু জানেন না। তাঁদের সচেতন করতে বলা হয়েছিল ব্লক থেকেই।’’

বিকেলে ওই ব্লকেরই ভাদুর পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুরে যায় কেন্দ্রীয় দলটি। পঞ্চায়েত প্রধান শান্তি রায় জানান, ব্লক এবং জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রাতারাতি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাড়ি থেকে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ মুছে ‘প্রধনমন্ত্রী আবাস যোজনা’ লেখা হয়। ‘মিশন নির্মল বাংলা’ মুছে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ লেখা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে অনেকটা ঝামেলা এড়িয়েছি।’’

গরমিল পেলেন? এই প্রশ্নে আর কে রায় বলেন, “কী কী দেখলাম, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন