Death

রাতের আগুনে পুড়ে মৃত্যু শাশুড়ি ও জামাইয়ের, রহস্য হাওড়ায়

গুরুতর ভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধার বছর পঁয়তাল্লিশের মেয়ে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাঁরাই নর্দমা থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর যায় দমকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৩
Share:

ভস্মীভূত: গভীর রাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এই বাড়িটি। সোমবার, লিলুয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়ার লিলুয়ার চকপাড়া এল‌াকার নতুনপল্লিতে রবিবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। মৃতদের নাম আঙুরবালা দলুই (৮৫) ও মধুসূদন সানা (৬০)। তাঁরা সম্পর্কে শাশুড়ি ও জামাই। গুরুতর ভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধার বছর পঁয়তাল্লিশের মেয়ে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাঁরাই নর্দমা থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর যায় দমকলে। কিন্তু বিধ্বংসী আগুনের গ্রাসে মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

Advertisement

সোমবার সকালে ওই পোড়া বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ঘটনার যথাযথ পুলিশি তদন্ত চেয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, যে জমির উপরে দরমার ওই বাড়িটি ছিল, সেই জমি দখল করতেই পরিকল্পিত ভাবে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পরিবারের দু’জনকে খুন করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমানে জমিটির বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। ঘটনার খবর পেয়ে ওই রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়ার নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা। নগরপাল জানান, যে ঘরে আগুন লেগেছিল, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। রান্নার গ্যাসও ছিল না। তাই কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা পরিষ্কার নয়। তিনি ফরেন্সিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন‌।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ চকপাড়ার নতুনপল্লির প্রায় সকলেই যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তখনই আচমকা টালির চাল ও দরমার দেওয়ালের ওই বাড়িতে আগুন লাগে। ভিতরে তখন ঘুমোচ্ছিলেন আঙুরবালা, মধুসূদন ও তাঁর স্ত্রী কমলা সানা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই পরিবারটি খুবই দরিদ্র। কিন্তু পাড়ায় তাঁরা সকলেই ভাল মানুষ বলে পরিচিত। আঙুরবালা আগে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে থাকতেন পাশের পাড়ায়। পরে নিজের দু’কাঠার বেশি জমিতে মধুসূদন দরমার ঘর তৈরি করার পরে শাশুড়িকেও সেখানে নিয়ে আসেন। তাঁদের এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একমাত্র ছেলে, বছর বাইশের বিদ্যুৎ সানা হাওড়াতেই একটি কারখানায় কাজ করেন। থাকেনও কারখানাতেই। এ দিন ওই পোড়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এলাকার বাসিন্দা বিজয় কর বললেন, ‘‘রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আগুনের খবর পেয়ে বাইরে এসে দেখি, গোটা বাড়িটা দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুনের শিখা উঠে গিয়েছে প্রায় তেতলা পর্যন্ত। ছড়িয়ে পড়েছে পাশের বাড়িতেও।’’ বাসিন্দারা জানান, এলাকায় একটি মাত্র পুকুর ছিল। সেটিও বুজিয়ে ফেলায় আগুন নেভানোর জলই পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে নর্দমা থেকে জল তুলেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তাঁরা।

Advertisement

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চকপাড়া নতুনপল্লির বাসিন্দারা ওই বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন। ঘটনার যথাযথ তদন্ত চেয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই পরিবারের জমি আত্মসাতের জন্য পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। তাঁদের এই দাবির সূত্র ধরেই মধুসূদন ও কমলার ছেলে বিদ্যুৎ ওই পোড়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘হাসপাতালে শুয়ে আমার মা আমাকে বলেছেন, আগুন থেকে বাঁচতে তিনি যখন বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করছিলেন, তখন তাঁকে কেউ আটকে রাখার চেষ্টা করছিল। শেষে জোর করেই বেরিয়ে আসেন মা।’’ কিন্তু কে বা কারা তাঁর মাকে আটকে রেখেছিল, তারাই বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল কি না, তা বলতে পারেননি বিদ্যুৎ। তবে, এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে যে রহস্য আছে, তা মানছেন বিদ্যুৎ-সহ এলাকার বাসিন্দারা।

এ দিকে, এ দিন বেলা বাড়তেই ঘটনাস্থলে একে একে উপস্থিত হন সিপিএম, তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিএমের পক্ষ থেকে স্থানীয় মহিলাদের থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়। তাতে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাদের গোলমাল বেধে যায়। অভিযোগ, ধাক্কা মারতে মারতে ওই সিপিএম কর্মীদের এলাকা থেকে বার করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন