Communal harmony

ঋতুপর্ণার সম্প্রদানের দায়িত্বে পিতৃসম হামেদ

এই সম্পর্কের শুরু ২২ বছর আগে। সাংসারিক অশান্তির জেরে পাঁচ বছরের ঋতুপর্ণাকে নিয়ে বাঁটুল গ্রামে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন কাবেরী বসু।

Advertisement

সুব্রত জানা

বাগনান শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৭
Share:

নববধূ ঋতুপর্ণার সঙ্গে শিক্ষক হামেদ আলি। নিজস্ব চিত্র

রক্তের সম্পর্ক নেই। ধর্মও আলাদা। কিন্তু এই সম্পর্ক ভালবাসার আর স্নেহের। তাই ছোট থেকে যে পিতৃসম মানুষটির স্নেহচ্ছায়ায় বড় হয়েছেন, বিয়ের সম্প্রদানের দায়িত্ব তাঁকেই দিলেন বাগনানের বাঁটুল গ্রামের বছর সাতাশের ঋতুপর্ণা বসু। সোমবার বিয়ের আসরে সেই দায়িত্বপালন করে খুশি বছর পঞ্চান্নর সৈয়দ হামেদ আলিও। নবদম্পতিকে আশীর্বাদের সময় চোখের জল বাঁধ মানছিল না তাঁরও।

Advertisement

এই সম্পর্কের শুরু ২২ বছর আগে। সাংসারিক অশান্তির জেরে পাঁচ বছরের ঋতুপর্ণাকে নিয়ে বাঁটুল গ্রামে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন কাবেরী বসু। তারপর থেকে তাঁর বাবার পেনশনে কোনওমতে চলত সংসার। কিন্তু ছোট্ট ঋতুপর্ণাকে কী ভাবে বড় করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেনি কাবেরীর। গ্রামের বাঁটুল পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় ঋতুপর্ণাকে। সেখানেই তাঁদের সঙ্কটের কথা শুনে পাশে দাঁড়ান প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হামেদ আলি।

কাবেরী বলেন, ‘‘দাদা আমাদের পাশে না থাকলে মেয়েটাকে বড় করতে পারতাম না। কখন কী ভাবে পড়াশোনা করলে ভাল হবে, কোথায় কম টাকায় বই পাওয়া যাবে, কোথায় কী স্কলারশিপ রয়েছে, সব সন্ধান দিতেন। শুধু তাই নয়, মেয়ের ভর্তির সময়ও টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। উনি আমার মেয়েকে সম্প্রদান না করলে আর কে করবেন?’’

Advertisement

২০১৭ সালে গ্রামেরই হরিনারায়ণপুর হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হন ঋতুপর্ণা। নববধূ ঋতুপর্ণা বলেন, ‘‘বাবার কথা আমার মনে পড়ে না। ২০১৮ সালে দাদুর মৃত্যুর পর আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সেই সময় মহীরূহের মতো দাঁড়িয়েছিলেন মাস্টারমশাই। ধর্ম আমাদের সম্পর্কে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। উনি আমার শুধু স্কুলের শিক্ষক নন, জীবনের শিক্ষক।’’

ঋতুপর্ণার বিয়ের অনুষ্ঠানে দিনভর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে হাজির ছিলেন হামেদের স্ত্রী কনিজা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী তাঁর সব পড়ুয়াদের নিয়ে ভাবেন। তবে ঋতুপর্ণাকে তিনি একটু বেশি স্নেহ করেন। ঋতুপর্ণা আমাদের বাড়িতে আইবুড়ো ভাতও খেয়ে এসেছে। ও আমাদের সন্তানের মতো।’’ আমতার একটি স্কুলের শিক্ষক অরুণ পাত্রও হাজির ছিলেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘‘এক পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষক তো গুরু। কিন্তু সকলে তো পড়ুয়ার কাছে তেমন হয়ে উঠতে পারেন না। ঋতুপর্ণার জীবনে হামেদ সেটা হয়ে উঠেছেন। এটা তো কৃতিত্বের। তাঁকে ঠিক ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা।’’

এ দিন বিয়ের আয়োজনের মাঝে অবসর মেলেনি হামেদের। ব্যস্ততার মাঝেই তিনি বলেন, ‘‘সব পড়ুয়া আমার কাছে সন্তানসম। তবু তাদের মাঝে কেউ কেউ স্নেহ একটু বেশি পায়। ঋতুপর্ণা তেমনই। তার জীবনের এত বড় একটা দায়িত্ব সে আমাকে দিয়েছে, সেটাই আমার পরম প্রাপ্তি। আর সব ধর্মের উপরে তো মানুষই সত্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন