ডানকুনি খাল সংস্কারে কয়েক কোটি টাকা নষ্টের অভিযোগ
Pollution of Dankuni Canal

জল উধাও, আবার জাগছে ‘গোবর নদী’

খালে অবাধে গোবর ফেলা নিয়ে খাটাল-মালিকদের ভূমিকার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে পুরসভা এবং প্রশাসনের ভূমিকাতেও।

Advertisement

প্রকাশ পাল , দীপঙ্কর দে

ডানকুনি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

ডানকুনি খাল সংস্কারের পরের ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

বহু আন্দোলন, মামলা-মকদ্দমার পরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কয়েক মাস আগেই সংস্কার হয়েছে ‘গোবর নদী’তে পরিণত হওয়া ডানকুনি খাল। রাশি রাশি গোবর তোলা হয়েছে যন্ত্র নামিয়ে। বহু বছর পরে টলটলে জল দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ফের খাটালের গোবর এসে জমছে খালে। আবার আড়ালে চলে গিয়েছে জল।

Advertisement

পরিবেশকর্মী এবং স্থানীয় মানুষজনের আশঙ্কা, জলে ব্যাপক দূষণ থেকে রেহাইয়ের যে সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হচ্ছে। সংস্কারের কাজে ব্যয় হওয়া টাকা জলে যাচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি জানিয়ে হস্তক্ষেপের দাবিতে রাজ্যের পরিবেশ, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, হুগলির জেলাশাসক, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার, ডানকুনি পুরসভা প্রভৃতি দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমি।

খালে অবাধে গোবর ফেলা নিয়ে খাটাল-মালিকদের ভূমিকার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে পুরসভা এবং প্রশাসনের ভূমিকাতেও। এ ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি খাটাল-মালিকদের একাংশের তরফে। তাঁদের মধ্যে হাজি লকমান রহমান নামে এক খাটাল-মালিক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে বলেন, ‘‘উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। আদালত কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে। যে হেতু বিষয়টি বিচারাধীন, আর কিছু বলতে পারব না।’’

Advertisement

পরিবেশকর্মী এবং সাধারণ মানুষের বক্তব্য, উচ্ছেদ নিয়ে আদালতে যাওয়ার অর্থ তো এই নয় যে, খালে অবাধে গোবর ফেলা যাবে। ডানকুনির পুরপ্রধান হাসিনা শবনম বলেন, ‘‘খাটাল-মালিকেরা প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। আমাদের তরফে ফের ওঁদের নোটিস পাঠানো হবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফের খালে গোবর ফেলা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।’’

এলাকাবাসী জানান, ডানকুনি খালের ধারে কয়েকশো খাটাল আছে। গরু-মোষের সংখ্যা ৩০-৪০ হাজার। অভিযোগ, এই বিপুল সংখ্যক গরু-মোষের গোবর-সহ যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হয় ডানকুনি খালে। কিছু কল-কারখানার বর্জ্যেরও ঠাঁই হয় খালে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, মামলার প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই সেচ দফতরের তরফে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যবাটী থেকে বালি পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল সংস্কার করা হয় কয়েক মাস আগে। খাটাল উচ্ছেদের জন্য নোটিস দেওয়া হয় পুরসভার তরফে। খালে গোবর ফেলা বন্ধে প্রচার করা হয়। খাটাল থেকে গোবর খালে ফেলার জন্য বসানো পাইপের মুখ বালি-সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করা হয়। কিন্তু তা খুলে গোবর যথারীতি খালে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শুক্রবার ওই জায়গা পরিদর্শনের পরে পরিবেশকর্মী গৌতম সরকার এবং মাবুদ হোসেনের খেদ, পুরসভার তৈরি রাস্তার নীচে বসানো পাইপ দিয়ে গোবর খালে ফেলা হচ্ছে। খাল ফের বুজে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, বুজে যাওয়া অংশ অবিলম্বে ফের সংস্কার করা হোক। গোবর কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক। পরিবেশকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, স্বচ্ছ জল ফিরলে খালকে নির্ভর করে জীবিকা তৈরি হবে। সর্বোপরি, দূষণ মিটবে।

এ কাজে পুরসভা বা প্রশাসন কতটা তৎপর হবে? প্রশ্ন থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন