Uluberia

আসে না মালগাড়ি, বেশি দামে সার কিনছেন হাওড়ার চাষিরা

সার বিক্রেতারা জানান, এই জেলায় ‘রেক পয়েন্ট’ না-থাকায় তাঁদের সার আনতে হয় হুগলির ব্যান্ডেল থেকে। সেখানে ‘রেক পয়েন্ট’ আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:১৯
Share:

সমস্যায় হাওড়ার চাষীরা। — ফাইল চিত্র।

ধান, পান, ফুল-সহ বিভিন্ন রকম চাষ নেহাত কম হয় না হাওড়ায়। কিন্তু সার কিনতে পকেট ফাঁকা হয় চাষিদের। বাজার থেকে সার কিনতে প্রত্যেককেই প্যাকেটের উপরে লেখা সর্বোচ্চ খুচরো দামের (এমআরপি) চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হয়। দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে। কারণ, এই জেলায় রেলপথে সার আসে না। নেই কোনও ‘রেক পয়েন্ট’ (যে জায়গায় মালগাড়ি এসে পণ্য নামায়)।

Advertisement

সার বিক্রেতারা জানান, এই জেলায় ‘রেক পয়েন্ট’ না-থাকায় তাঁদের সার আনতে হয় হুগলির ব্যান্ডেল থেকে। সেখানে ‘রেক পয়েন্ট’ আছে। ফলে, জেলায় সার আনতে পরিবহণ খরচ বাড়ে। সেই কারণেই খোলা বাজারে তাঁরা সর্বোচ্চ খুচরো দামের চেয়ে বেশিতে সার বিক্রি করতে বাধ্য হন।

সমস্যাটির কথা স্বীকার করেছেন রাজ্য কৃষি দফতরের কর্তারা। দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখার আবাদা স্টেশনে রেলের ‘গুডস ইয়ার্ড’ আছে। সেখানে অন্য পণ্য নিয়ে মালগাড়ি এলেও সার নিয়ে আসে না। সেটা হলে জেলার বিভিন্ন সারের দোকানে কম পরিবহণ খরচে সার পৌঁছনো সহজ হয়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এ জন্য কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সারের বিষয়টি ওই মন্ত্রকই নিয়ন্ত্রণ করে। তারা আবাদায় ‘রেক পয়েন্ট’করতে চেয়ে রেলের কাছে আবেদন করতে পারে।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নীরজ কুমার বলেন, ‘‘রেক আসার বিষয়টি নির্ভর করছে সার ‘বুকিং’ করার উপরে। বুকিং হলে আবাদায় রেক আসার কোনও সমস্যা নেই।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলায় বছরে গড়ে ৫৫ হাজার টন সার লাগে। গত কয়েক বছর ধরেই সর্বোচ্চ খুচরো দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে চাষিরা সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকার সমবায়ের মাধ্যমে যে সার বিক্রি করে, সেখানেও কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে।

জেলা কৃষি দফতরের বক্তব্য, সারের কালোবাজারি রুখতে গত বছরের জুলাই মাস থেকে অভিযান চলছে। জেলায় সারের ডিলার ও খুচরো বিক্রেতার সংখ্যা প্রায় ৫০০।

কৃষিকর্তাদের বক্তব্য, প্রত্যেক খুচরো বিক্রেতার দোকানে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। শতাধিক ডিলারকে সারের দামবৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়েছে। ফলে, চলতি আলু চাষের মরসুমে সারের কালোবাজারি আটকানো গিয়েছে। বোরো মরসুমেও একই ভাবে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলার সার সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক হৃষীকেশ মণ্ডল।

গত শুক্রবার জেলার সারের সব খুচরো বিক্রেতা এবং ডিলারদের নিয়ে বৈঠক করে জেলা কৃষি দফতর। সেই বৈঠক শেষে হৃষীকেশ বলেন, "সার বিক্রেতাদের বলা হয়েছে, বোরো মরসুমে সর্বোচ্চ খুচরো দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া যাবে না।’’ বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া জেলায় ‘রেক পয়েন্ট’ করার ব্যাপারটি নিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু সেটা না থাকার সুযোগ নিয়ে সারের বেশি দাম নেওয়া যাবে না।’’

এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে সার বিক্রেতারা আবার চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা লোকসানের ভয় পাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন