tourism

দ্রষ্টব্য হুগলিতে অনেক,থাকার জায়গা কোথায়!

এক সময়ে এই জেলার গঙ্গাপাড়ের শহরগুলিতে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ উপনিবেশ গড়েছিল। তখনকার নানা স্থাপত্য এখনও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টানে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৬
Share:

ভ্রমণ: গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে বিদেশি পর্যটকেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

দেখার জায়গা আছে বিস্তর। কিন্তু পর্যটকদের তেমন থাকার জায়গা কই!

Advertisement

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে পর্যটনে জোর দেওয়া, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার কথা বলেছেন। তার প্রেক্ষিতে হুগলি জেলার পর্যটন নিয়ে উঠে আসছে পরিকাঠামোগত নানা ঘাটতির কথা।

এক সময়ে এই জেলার গঙ্গাপাড়ের শহরগুলিতে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ উপনিবেশ গড়েছিল। তখনকার নানা স্থাপত্য এখনও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টানে। বিদেশি পর্যটকদের একাংশের বক্তব্য, এখানে গঙ্গাপাড়ের শহরগুলিতে ভাল থাকার জায়গার অভাব। স্থানীয় ঐতিহ্যনির্ভর হস্তশিল্প, বইপত্র বা অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থাও বিশেষ নেই।

Advertisement

এ রাজ্যে লিয়ো নোরা ভ্রমণ সংস্থা চালান। তাঁর স্বামী পিটার ডেব্রিজ় স্ত্রীর সংস্থার ভ্রমণ-প্রদর্শক (ট্যুর গাইড)। হুগলির আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়েও গবেষণা করেন। পিটারের কথায়, ‘‘হুগলির গঙ্গাপাড়ের বিভিন্ন শহর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। পরিকাঠামোর কিছু উন্নতি হয়েছে। আরও দরকার।’’

মসৃণ পথঘাট পর্যটনের অন্যতম সহায়ক। অথচ, সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লি রোড সংস্কারে বিস্তর টালবাহানা হয়েছে। চলছেও। পর্যটকদের খেদ, ভিতরের রাস্তা তো বটেই, জিটি রোডও সংকীর্ণ। ফেরি-পরিষেবা নিয়ে সমস্যাও কম হয়নি। পিটার বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরে ডেনমার্ক ট্যাভার্নে থাকার খরচ প্রচুর। মোটামুটি খরচে ভাল থাকার জায়গা প্রয়োজন। অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রেও ভাল হোটেল দরকার।’’

অনেকের বক্তব্য, পর্যটকদের কথা ভেবে সরকারি বা স্থানীয় উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে হস্তশিল্প-সহ অন্যান্য জিনিসের দোকান প্রয়োজন। পর্যটকেরা স্মরণিকা বা বই খোঁজ করেন। তা ছাড়া, হেরিটেজ সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচারও জরুরি। পর্যটনের প্রসারে নানা পরিকল্পনা সত্ত্বেও শ্রীরামপুরে ‘ঐতিহ্য-অঞ্চল’ (হেরিটেজ জ়োন) নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন আছে। চুঁচুড়ায় ঐতিহ্যবাহী একাধিক ভবন রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন কম নেই।

এই জেলায় কামারপুকুর, তারকেশ্বর, হংসেশ্বরী মন্দির, ব্যান্ডেল চার্চ, ইমামবাড়া, ফুরফুরা শরিফের মতো ধর্মীয় স্থানে বহু মানুষ আসেন। কামারপুকুর, তারকেশ্বরে থাকার ভাল বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে, ইমামবাড়া বা ব্যান্ডেল চার্জ সংলগ্ন জাগায় থাকার ভাল হোটেলের অভাব। এ ক্ষেত্রে আসতে হবে কয়েক কিলোমিটার দূরে মূল চুঁচুড়া শহরে। পর্যটক আসেন মন্দিরঘেরা গুপ্তিপাড়াতেও। এখানে জনৈক সুব্রত মণ্ডল কিছু দিন আগে একটি অতিথিশালা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পর্যটক মোটামুটি আসছেন। বিদেশিদের দেখি, টুকটাক কেনাকাটা করেন। বিপণনের ভাল ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।’’

বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিপণনের ভাল ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এই জেলায় ঘুরেছেন, এমন বিদেশিদের অভিজ্ঞতা, এখানকার মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ। ভাষা সমস্যাও তেমন হয় না। অনেকেই ইংরেজিতে সাবলীল।

ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ফটোগ্রাফার কেভিন স্ট্যান্ডেজ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। তিনি এ রাজ্যে আসছেন। সফরসূচিতে হুগলিও রয়েছে। ই-মেলে জানালেন, টেরাকোটার কাজ রয়েছে, এমন মন্দির দেখবেন।

হুগলিতে কত পর্যটক বছরভর আসেন? বিদেশি কত? রাজস্ব কত আসে?

এর উত্তর জেলা প্রশাসনের কাছে মেলেনি। বাজেটে পর্যটন প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সন্দীপকুমার ঘোষ জানান, পর্যটন দফতরের পরবর্তী নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, জেলায় পর্যটনের প্রসারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন