Manoranjan and Runa conflict

বালি আর মাটির অবৈধ কারবারই গোলমালের মূলে?

হুগলির এই প্রত্যন্ত ব্লকে তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের একাংশের দ্বন্দ্ব কিছুতেই মিটছে না। ফেসবুকে ‘লড়াই’ চলছেই। লোকসভা ভোটের আগে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের এই অবস্থায় উদ্বেগ বাড়ছে। কেন এই হাল?

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল

বলাগড় শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৫
Share:

যুযুধান: মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং রুনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটের আবহে চতুর্দিকে তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগানের মধ্যে তিনি শুনিয়েছিলেন অন্য কথা। বলেছিলেন, তিনি খেলোয়াড় নন, ‘লেখোয়াড়’। আড়াই বছর পেরোতে না পেরোতেই এই সে দিন তিনি সমাজমাধ্যমে লিখে দিলেন, ‘এ বার খেলা জমবে’! বিরোধীরা নন, বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘খেলার’ প্রতিপক্ষ এখন দলেরই স্থানীয় কিছু নেতা-নেত্রী।

গত আড়াই বছরে বলাগড়ে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে, মনোরঞ্জন গলার শিরা ফুলিয়েছেন দলেরই একাংশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তার কতটা সত্যি? কতটাই বা মিথ্যা? শাসকদল কো‌নও সময়েই এ সব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। তবে তাতে রাজনৈতিক মহল তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও গুঞ্জন থেমে থাকেনি।

Advertisement

কেন সরব মনোরঞ্জন?

বলাগড় ব্লক জুড়ে গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি তোলার অভিযোগ আজকের নয়। নানা সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের বহু আশ্বাসেও যে সেই কারবারের রমরমা বন্ধ হয়নি এবং শাসকদলের নেতাদের একাংশ এর ‘মধু’ খান, এমন কথা কান পাতলেই শোনা যায়। মনোরঞ্জনেরও অভিযোগ এ নিয়েই। সমাজমাধ্যমে ব্লকের এক নেতাকে তিনি ‘বালি ও মাটির মাফিয়া’ বলে চিহ্নিত করেন। খামারগাছি ঘাটে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো গাড়ি নিয়ে হুমকি দিয়ে টাকা তুলছেন এক নেতা, এমন
ছবিও তাঁর কাছে আছে বলে
বিধায়কের দাবি। দল চাইলে তিনি ওই ছবি দিতে প্রস্তুত বলেও জানান। ওই নেতাকে তিনি চিহ্নিত করেছেন ‘ফুলনদেবীর স্বামী’ হিসাবে। ‘ফুলনদেবী’ বলতে তিনি দলের এক নেত্রীকেই বুঝিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। ওই নেত্রীর স্কুলে চাকরি পাওয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন বিধায়ক।

প্রশ্ন হচ্ছে, মাটি-বালি নিয়ে খোদ শাসকদলের বিধায়ক সমাজমাধ্যমে খোলাখুলি একাধিক দিন অভিযোগ করলেও পুলিশ-প্রশাসন কী করছে?

সূত্রের খবর, গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে তোলা মাটি ট্রাকে বা ট্রাক্টরে চাপিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শাসক দলের একাধিক নেতা এর সঙ্গে জড়িত। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, ওই কারবারের মুনাফা পৌঁছে যায় ‘উঁচু’ জায়গায়। প্রশাসন বা পুলিশ দেখেও দেখে না। মাঝখান থেকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। ফুলেফেঁপে ওঠেন এক শ্রেণির নেতা। বিরোধীদের অভিযোগ, বালি-মাটির অবৈধ কারবারের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গোলমালেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ‘চরম’ আকার নিয়েছে।

হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, বর্তমানে গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি বা মাটি তোলার কারবার বন্ধ। বিধায়কের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও তদন্ত হবে? পুলিশের বক্তব্য, এ নিয়ে বিধায়ক লিখিত কোনও অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ হলে সেই অনুযায়ী তদন্ত করা হবে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধায়কের অভিযোগের তির দলের যুবনেত্রী তথা হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুন এবং তাঁর স্বামী অরিজিৎ দাসের দিকে। অরিজিৎ সিজা কামালপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। রুনা-অরিজিৎও ছেড়ে কথা বলেননি দলীয় বিধায়ককে। অরিজিৎ ফেসবুকেই বাক্‌যুদ্ধে নেমে বিধায়কের নাম না করে তাঁকে সাহিত্যিক বলে উল্লেখ করে কার্যত তাঁর দুর্নীতির দিকে
ইঙ্গিত করে লেখেন, মাত্র দু’বছরের মধ্যেই রাজারহাটে তাঁর কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট হয়েছে। দু’বছর বলতে অরিজিৎ মনোরঞ্জনের বিধায়ক হওয়ার সময়ের কথা বলতে চেয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে।

প্রত্যাশিত ভাবেই কোনও পক্ষই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানেননি। বরং তদন্ত আহ্বান করেছেন। এখন দল বা পুলিশ-প্রশাসন— তদন্তে কতটা আগ্রহী, প্রশ্ন সেটাই। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন