Hospital

Patient: চার মেডিক্যাল কলেজে ঘুরে গ্রামের হাসপাতালে সেরে উঠছেন যুবক

মাসখানেক আগে সাইকেল থেকে পড়ে বাঁকুড়ার ওন্দার ছাগুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাপির ঘাড়ের হাড় ভেঙে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৫
Share:

বাপি রায়।

কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে যখন ছুটি দেওয়া হল, তখনও বসতে বা নিজের হাতে খেতে পারছিলেন না বছর বাইশের বাপি রায়। তার আগে একের পর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়ানোর ঝক্কি তো ছিলই। অবশেষে, শ্রীরামপুরে গ্রামীণ এলাকার অপেক্ষাকৃত ছোট হাসপাতালে ঘাড়ের ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার হল। বাপি এখন দিব্যি উঠে বসছেন। নিজের হাতে খাচ্ছেন। অল্প হাঁটাচলাও করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, আরও কিছু দিন চিকিৎসার মধ্যে থাকলে কাজে ফিরতে পারবেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে যুবকটি।

Advertisement

মাসখানেক আগে সাইকেল থেকে পড়ে বাঁকুড়ার ওন্দার ছাগুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাপির ঘাড়ের হাড় ভেঙে যায়। বাড়ির লোকেরা জানান, তাঁকে প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক্স-রে করা হয়। জানানো হয়, যে ভাবে ভেঙেছে, তার চিকিৎসা সেখানে সম্ভব নয়। ওই রাতেই তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করা হলেও শয্যা নেই জানিয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এনআরএস, আরজি কর হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি করা যায়নি। আরজি করে পরামর্শ দেওয়া হয়, এক দিন পরে বহির্বিভাগে দেখাতে। যদিও, রোগী তখন যন্ত্রণায় রীতিমতো কাতরাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাপিকে নিয়ে ফের এনআরএস-এ যান আত্মীয়েরা। এ বার ভর্তি নেওয়া হয়। সেখানে দিন ১০-১২ ভর্তি ছিলেন। গত ৫ মার্চ সেখান থেকে ছুটি দেওয়া হয়। বাপির আত্মীয় হারু রায় বলেন, ‘‘যে দিন ছুটি দেওয়া হল, দাঁড়ানো দূর অস্ত, বসতেও পারছিল না বাপি। হাত অসাড়ই ছিল।’’

Advertisement

এক পরিচিতের পরামর্শে ওই দিনই বাপিকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে আনা হয়। এখানে গত ১৩ মার্চ অস্ত্রোপচার হয়। হারু বলেন, ‘‘অপারেশনের পরে বাপি এখন অনেকটাই সুস্থ। উঠে বসছে। অল্প হাঁটছে। নিজের হাতে খেতেও পারছে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, আর কয়েকটা দিন থাকতে হবে। বাড়ি ফিরে ফিজ়িয়োথেরাপি করতে হবে। তা হলে পুরো সেরে উঠবে। ভাগ্যিস এখানে এসেছিলাম! না হলে বাপি হয়তো বিছানা থেকে উঠতেই পারত না।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচারে একটি ধাতব জিনিস ঘাড়ে বসাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে চিকিৎসার খরচ লাখখানেক টাকায় দাঁড়াবে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে ৪৫ হাজার টাকা মিলবে। ৩৩ হাজার টাকা জোগাড় হয়েছে। বাকি টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোগাড়ের আশ্বাস দিয়েছেন। হারু বলেন, ‘‘হাসপাতালেই তিন বেলা খাচ্ছি। ওরা থাকতেও দিয়েছে। বাঁকুড়া বা কলকাতার হাসপাতাল ঘুরে যে হয়রানি হয়েছে, এখানে সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা হল। এমন পরিষেবা পাব, ভাবতেও পারিনি।’’

গণ-উদ্যোগে তৈরি এই হাসপাতালের সম্পাদক, চিকিৎসক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘ঘাড়ের একটি হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই যুবক হাত নাড়াতে পারছিলেন না। স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য প্যারালাইসিসের ঝুঁকি সত্ত্বেও অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। কয়েক মাস বিশ্রামে থাকলে এবং ফিজ়িয়োথেরাপি করলে উনি কাজে ফিরতে পারবেন। ওঁর পরিবার ওঁর উপরে নির্ভরশীল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন