Domestic LPG

রান্নার গ্যাস প্রকাশ্যেই ভরা হচ্ছে গাড়িতে, প্রশ্ন

রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গত দু’বছরে শ্যামপুরে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। তার পরেও এমন বেআইনি কাজে পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

সুব্রত জানা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১০
Share:

এই ভাবে রান্নার গ্যাস গাড়িতে ভরা চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

বিপজ্জনক ভাবে রান্নার গ্যাস ভরা হচ্ছে গাড়িতে। অভিযোগ, সকলের চোখের সামনেই দিনের পর দিন এই কাণ্ড চলছে হাওড়ার শ্যামপুরে। রাস্তার ধারে প্রকাশ্যেই রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারকে উল্টে পাইপ লাগিয়ে গাড়িতে ভরা হচ্ছে গ্যাস। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। জীবনহানিও ঘটতে পারে।

Advertisement

রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গত দু’বছরে শ্যামপুরে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। তার পরেও এমন বেআইনি কাজে পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। সূত্রের খবর, বছরে যত গ্যাস সিলিন্ডার বরাদ্দ, দরিদ্র পরিবার তত কিনতে পারে না। বাড়তি সিলিন্ডার ১০০-১৫০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনে নেন এক শ্রেণির লোক। সেই গ্যাসই ভরা হয় গাড়িতে।

তাপস দাস নামে শ্যামপুরের এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটারের বক্তব্য, উজ্জ্বলা গ্যাস ব্যবহারকারীরা সাধারণত বছরে ১২টি সিলিন্ডার কিনতে পারেন না। ‘ডেলিভারি বয়’দের (যাঁরা বাড়ি বাড়ি সিলিন্ডার সরবরাহ করেন) একাংশ ওই সব গ্যাস গ্রাহকদের নামে তুলে চড়া দাম বাজারে বিক্রি করেন। গাড়ি ব্যবসায়ীরা সেগুলি কিনে গাড়িতে ভরেন। তাঁর কথায়, ‘‘এতে কারবারিদের লাভ বেশি। কিন্তু গাড়ি-মালিকরা জানেন না, রান্নার গ্যাসে চললে গাড়িরও ক্ষতি হয়। এ ভাবে রান্নার গ্যাস ভরলে যে কোনও সময় বিপদও ঘটতে পারে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে শ্যামপুর-বাগনান রোডে দেওড়ার কাছে রাস্তার ধারে একটি গাড়িতে রান্নার গ্যাস ভরছিলেন দুই যুবক। ছবি তুলতেই তাঁরা হকচকিয়ে যান। তড়িঘড়ি সিলিন্ডার থেকে গাড়িতে গোঁজা পাইপ খুলে নেন। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরোতে থাকে। যদিও বিপদ কিছু ঘটেনি। এক যুবককে প্রশ্ন করতে তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘শ্যামপুর জুড়ে এই ভাবে গাড়ি চলে। এলাকায় গাড়িতে গ্যাস ভরার পাম্প নেই। পাম্প এখান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। রোজ সেখানে গিয়ে গ্যাস ভরা সম্ভব নয়। তাই এই ভাবেই অনেকে গাড়িতে গ্যাস ভরিয়ে নেন।’’

শ্যামপুরের দিনমজুর পরিবারের এক মহিলা জানান, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বছরে ১২টি বরাদ্দ থাকলেও ৬টির বেশি তাঁরা ব্যবহার করেন না। বাকি ছ’টি ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে নেন কিছু ‘ডেলিভারি বয়’। ওই গ্যাস কোথায় যায়, তা তিনি জানেন না। কয়েক জন গ্রাহক জানালেন, ‘ডেলিভারি বয়’দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও সিলিন্ডার জোগাড় করে বেআইনি কারবারিরা।

পুলিশের দাবি, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গাড়িতে গ্যাস ভরার কোনও অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিডিও (শ্যামপুর ২) সঞ্জু গুহ মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর, পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। নজরদারি চালাতে বলব।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস ব্যবহার নিয়ে একাধিক বার মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে অনেক বৈঠক করা হয়েছে। তারপরেও লুকিয়ে-চুরিয়ে কেউ হয়তো এই কাজ করছে। নজরদারি বাড়ানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন