শোভাযাত্রা বন্ধেও করোনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল স্ট্র্যান্ড
Jagaddhatri Puja

Jagaddhatri Puja: ভিড়ের চেনা ছবিই ফিরল বিসর্জনে

যে শহরের ১৫টি ওয়ার্ড খাতায়-কলমে গণ্ডিবদ্ধ , সেখানে পুজোর দিনের পরে বিসর্জনেও ভিড়ের বাড়বাড়ন্ত দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
Share:

কোভিডবিধি উপেক্ষা করে উপচে পড়া ভিড় জগদ্ধাত্রীর বিসর্জনে। রবিবার চন্দননগরের রানিঘাটে। ছবি: তাপস ঘোষ।

আলোর বাহার ছিল না। কিন্তু, করোনার ভ্রুকুটি সত্বেও চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানকে কেন্দ্র করে রবিবার ভিড় ভেঙে পড়ল স্ট্র্যান্ডে। জলে গেল স্বাস্থ্যবিধি।

Advertisement

যে শহরের ১৫টি ওয়ার্ড খাতায়-কলমে গণ্ডিবদ্ধ (কনটেনমেন্ট জ়োন), সেখানে পুজোর দিনের পরে বিসর্জনেও ভিড়ের বাড়বাড়ন্ত দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, উৎসবমুখর জনতা শুধু যে ঠাসাঠাসি করে গঙ্গার ঘাটে ভিড়লেন তাই নয়, মাস্ক পরার সচেতনতা দেখা যায়নি অধিকাংশের মধ্যে। যথাসম্ভব কম লোক নিয়ে ভাসান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা, বাস্তবে তা হল না। এই পরিস্থিতিতে করোনা ফের মাথাচাড়া দেবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (চন্দননগর) বিদিতরাজ বুন্দেশ বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে বিসর্জন হচ্ছে। বাড়তি কিছু লোক বেরিয়ে পড়েছেন। তাঁরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানেন, সে কথাবলা হচ্ছে।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় কমিটির আওতায় ১৭১টি পুজো রয়েছে চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে। কমিটি জানিয়েছে, দুই শহরে গঙ্গায় ১৮টি ঘাটে রবিবার ৮০টি এবং আজ, সোমবার বাকি প্রতিমা বিসর্জন হবে। অধিকাংশই চন্দননগরের রানিঘাটে। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রবিবার আঁটোসাটো পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার মোড়ে, বিসর্জনের ঘাটে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল।

সবকিছু তালগোল পাকাল ভিড়ে। আলোকসজ্জা না থাকায় শুধুমাত্র একটি ট্রাকই ভাসানের ঘাটে গিয়েছে প্রতিমা নিয়ে। ট্রাকের সামনে পিছনে প্রচুর লোক ঢাক বা কুড়কুড়ির তালে নাচতে নাচতে গিয়েছেন। দ‌লে মহিলার সংখ্যাও কম ছিল না। ছিল ছোটরাও। আকাশ মেঘলা ছিল। বিকেলে ছিঁটেফোটা বৃষ্টিও হয়। বিরূপ প্রকৃতিও জনতাকে আটকাতে পারেনি। পুজো কমিটিগুলিকে বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় মানা যায়নি। বিকেল থেকে ঘাটে প্রতিমার সংখ্যা বাড়ে।

বারোয়ারির বাড়তি লোকের পাশাপাশি ভাসান দেখতে ট্রেনে লোকজন এসেছেন। গঙ্গার ওপারে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকেও লঞ্চে বহু মানুষ হাজির হয়েছেন। সব মিলিয়ে স্ট্র্যান্ডে তিলধারণের জায়গা ছিল না। সাধারণ ভাবে শোভাযাত্রা সহকারে বিসর্জনের সময় এই ভিড় চেনা দৃশ্য। কিন্তু, করোনা আবহে এই জনজোয়ার ‘অবাঞ্ছিত’ বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। পুজো কমিটির লোকেরা অবশ্য প্রতিমাকে ঘিরে আবেগের কথা ব‌লে বিষয়টিকে লঘু করতে চেয়েছেন।

নিয়োগীবাগান সর্বজনীনের কর্মকর্তা তাপস দাসের বক্তব্য, ‘‘ঠাকুরের সঙ্গে পাড়া-পড়শিরা অনেকেই চলে এসেছেন। এটা আবেগের বিষয়। নিষেধ করা যায়নি।’’ একটি পুজো কমিটির এক কর্তার কথায়, ‘‘এই সময়টার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকেন। করোনাকে উৎসাহ দেওয়া হবে না বলেই শোভাযাত্রা বাতিল হয়েছে। কিন্তু আবেগের কারণে অনেকে বেরিয়েছেন।’’তবে, কেন্দ্রীয় কমিটির এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বারোয়ারি ভিড় করেনি।ভিড় সাধারণ মানুষের। এটা প্রশাসনের ব্যাপার।’’

উত্তর ২৪ পরগনাের ভাটপাড়ার বাসিন্দা সুমন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের লোকজনের সঙ্গে স্ট্র্যান্ডে এসেছিলেন ভাসান দেখতে। তাঁর কথায়, ‘‘চন্দননগরের শোভাযাত্রা বিখ্যাত। প্রতিবার আসি। এ বার শোভাযাত্রা নেই শুনে ভেবেছিলাম, বেশি লোক হবে না। কিন্তু এসে দেখছি, উল্টো।’’

গঙ্গা দূষণ রুখতে এ দিন প্রতিশ্রুতিমতোই প্রতিমা বিসর্জনের পরেই কাঠামো তুলে ফেলার ব্যবস্থা করেছিল চন্দননগর পুরসভা। প্রতিমার সাজপোশাক বা অন্য সরঞ্জাম যাতে ভেসে না যায়, সে জন্য রানিঘাটে নির্দিষ্ট জায়গায় জাল দিয়ে ঘেরা হয়। শহরের বাসিন্দা তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দূষণ রোধে রানিঘাটে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য ঘাটে ততটা হয়নি। সর্বত্র এই ব্যবস্থা
থাকলে ভাল হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন