Engine Van Pollution

জাতীয় সড়কে বাড়ছে ইঞ্জিনভ্যানের দাপট

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে এই ভ্যান তৈরি হচ্ছে না। অনেক সময়েই ব্রেক ধরে না। ফলে, দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণও মেলে না।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩২
Share:

কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে চলেছে ইঞ্জিন ভ্যান। বাগনানে তোলা ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

পরিবহণ দফতরের কোনও স্বীকৃতি নেই। তা সত্ত্বেও গ্রামীণ হাওড়ার মুম্বই রোড এবং সংলগ্ন রাস্তাগুলিতে দাপট বাড়ছে ইঞ্জিনভ্যানের। কালো ধোঁয়া উড়িয়ে সেগুলি কখনও পণ্য পরিবহণ করছে, কখনও যাত্রী। দুর্ঘটনা ঘটছে। ক্ষোভ বাড়ছে ছোট ট্রাকের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

Advertisement

দিন পাঁচেক আগেই উলুবেড়িয়ার বাণীতলায় জাতীয় সড়কে ইঞ্জিনভ্যান ও লরির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ভ্যানের চালক গুরুতর আহত হয়ে উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মাস সাতেক আগে তুলসীবেড়িয়া মোড়ের কাছে ইঞ্জিনভ্যানের ধাক্কায় বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বছরের গোড়ায় কুলগাছিয়ার শ্রীরামপুরে মুম্বই রোডে ইঞ্জিন ভ্যান ও লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক মহিলা-সহ দু’জনের। এ ছাড়াো, ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে এই ভ্যান তৈরি হচ্ছে না। অনেক সময়েই ব্রেক ধরে না। ফলে, দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণও মেলে না। ছোট ট্রাকের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইঞ্জিনভ্যানের দাপটে তাঁদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। একটি ছোট ট্রাকে যত মাল ধরে, সমপরিমাণ মাল নিয়ে ইঞ্জিনভ্যান কম ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত পণ্যও বোঝাই করা হয়েছে।

Advertisement

ইদানীং নতুন মডেলের নানা রকম ইঞ্জিনভ্যান দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ হাওড়ায়। মাপেও অনেকটাই বড়। কোনও কোনও ভ্যানে সাধারণ হ্যান্ডলের বদলে স্টিয়ারিং। মুম্বই রোডে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে, বড় ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে।

উলুবেড়িয়া শহরের বাসিন্দা, শিক্ষক সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘গ্রামগঞ্জে পরিবহণ ব্যবস্থা ভাল না-থাকার জন্য কিছু মানুষ পায়ে টানা ভ্যানে ইঞ্জিন লাগিয়ে ব্যবহার শুরু করেছিলেন, এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহর ছেয়ে গিয়েছে ইঞ্জিনভ্যানে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো আছেই, দূষণও ছড়াচ্ছে গাড়িগুলি। প্রশাসন কেন এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না, জানি না।’’

উলুবেড়িয়া ট্রাকমালিক সংগঠনের সহ-সম্পাদক সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘ইঞ্জিনভ্যানের জন্য ছোট ট্রাকের মালিকেরা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ইঞ্জিনভ্যান চালানোর জন্য সরকারকে কর দিতে হয় না। তাই পুলিশ প্রশাসনের উচিত বেশি করে নজরদারি চালিয়ে ভ্যানগুলিকে বাজেয়াপ্ত করা। তাতে দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দূষণ কমবে।’’

উলুবেড়িয়ার অতিরিক্ত পরিবহণ আধিকারিক রবিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইঞ্জিনভ্যান বেআইনি। পরিবহণ দফতরে এই গাড়ির কোনও স্বীকৃতি নেই। কোনও রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। এই গাড়িগুলিকে রুখতে হলে পুলিশ প্রশাসনকেই দেখতে হবে। যে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন থাকে না, পরিবহণ দফতর সেগুলির প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে না।’’

হাওড়া গ্রামীণ জেলা ডিএসপি (ট্র্যাফিক) অনির্বাণ হোম রায় বলেন, ‘‘ইঞ্জিনভ্যান বেআইনি ভাবে চলছে, এটা ঠিক। এর আগে বিষয়টি নিয়ে অনেক চর্চাও হয়েছে। কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ভাবনাচিন্তা চলছে। প্রাথমিক ভাবে চালকদের সতর্ক করা হবে। কথা না শুনলে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন