Chinsurah

ডিজে-শব্দবাজির ‘সন্ত্রাসে’ এল নতুন বছর

শনিবার, বর্ষবরণের রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৫ মিনিট শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানোর ছাড় ছিল।

Advertisement

, নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৩
Share:

হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে এ ভাবেই ডিজে বক্স বাজিয়ে চলেছে বর্ষবরণ উৎসব। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ, দীপঙ্কর দে ও কেদারনাথ ঘোষ

নিষেধ রয়েছে। তা দেখার জন্য পুলিশ-প্রশাসন রয়েছে। তবু, ডিজে-শব্দবাজির আগ্রাসনেই নতুন বছর এল হুগলিতে।

Advertisement

শনিবার, পুরনো বছরের শেষ দিন এবং রবিবার, নতুন বছরের প্রথম দিন গোটা জেলাতেই ডিজের দাপট ছিল। অভিযোগ পেয়ে দু’-এক জায়গায় পুলিশ ডিজে বন্ধ করলেও নিষিদ্ধ বক্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, এমন খবর নেই। সব মিলিয়ে ‘শব্দসন্ত্রাস’ থেকে দূরে থাকতে চাওয়া নাগরিক সমাজ উৎকণ্ঠা দিয়েই নতুন বছর শুরু করল।

বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই পরিবেশমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে ডিজে ও বাজি কঠোর ভাবে আটকানোর কথা বলেছেন। পুলিশ-প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ তো দেখলাম না। হুগলির অনেক জায়গা থেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আইন অমান্য করে বাজালে নিষিদ্ধ ডিজে বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার কেন করা হবে না, সেটাই প্রশ্ন। সরকারি উদ্যোগে প্রচারও দরকার।’’

Advertisement

শনিবার, বর্ষবরণের রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৫ মিনিট শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানোর ছাড় ছিল। কিন্তু, তার অনেক আগে থেকেই দুমদাম সশব্দে বাজি ফাটতে থাকে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বাজি ফেটেছে রবিবারেও। দু’দিনই সমানতালে দিনভর ডিজেও বেজেছে। হুগলি শিল্পাঞ্চলের চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, কোন্নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারস্বরে গান বাজার অভিযোগ মিলেছে। চন্দননগর, ভদ্রেশ্বরে পুলিশ ডিজে বন্ধ করে দায় সেরেছে। কোথাও কোথাও তাও হয়নি বলে অভিযোগ। হরিপাল, তারকেশ্বরের মতো গ্রামীণ এলাকা থেকেও একই অভিযোগ মিলেছে।

রবিবার সিঙ্গুরের বিভিন্ন পার্কে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে চড়ুইভাতি হয়েছে। দিয়াড়ায় একটি পিকনিক স্পটের বাইরে বড় বড় বক্স বাজতে দেখা যায়। একই ছবি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা নিউ দিঘা পার্কের বাইরেও। গাড়িতে প্রচণ্ড শব্দে গান বাজিয়ে চড়ুইভাতি করতে গিয়েছেন যুবক-যুবতীর দল। গাড়িতে লম্বা লম্বা সাউন্ড বক্স বাজিয়ে পিকনিকের দল গিয়েছে মগরার জিটি রোড ধরে। রাস্তায় পুলিশ দেখলে শব্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ গাড়ি আটকে গান বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু, বক্স বাজেয়াপ্ত বা ধরপাকড় করা হয়নি।

আরামবাগ মহকুমায় জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা গড় মান্দারণ এবং রামমোহনের আমবাগানে যথাক্রমে প্রায় ৬ এবং ৪ হাজার লোক হয়েছিল। দু’জায়গাতেই ডিজে সঙ্গে আনা দলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বন দফতরের কড়াকড়ির জন্য চাঁদুর জঙ্গলে ডিজে বাজেনি। পশুপাখি স্বস্তি পেয়েছে। শর্ত মেনে ৮০টি দল পিকনিক করেছে বলে জানান রেঞ্জ অফিসার আসরাফুল ইসলাম। বন দফতর এবং পুলিশের যৌথ নজররদারিতে জঙ্গল সংলগ্ন চৌহদ্দির মধ্যেও ডিজে বাজাতে দেওয়া হয়নি।

দ্বারকেশ্বর নদ, মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং দামোদর নদের চরে ছাউনি করে বহু দল চড়ুইভাতি করেছে। এখানে কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিজের দৌরাত্ম্য ছিল। যদিও এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডলের দাবি, “মহকুমা জুড়ে পুলিশি টহলদারি ছিল। ডিজে বাজানোর অভিযোগ মেলেনি।”

শ্রীরামপুরের নওগাঁর আশপাশে জোরে গান বাজানোর অভিযোগ ওঠে। বৈদ্যবাটী, শেওড়াফুলিতে বক্স চালিয়ে নাচ করতে দেখা গেছে। আকাশে আতশবাজির শেল ফেটেছে ভালই। কোন্নগরের যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক তথা মঞ্চের অন্যতম সংগঠক জয়ন্ত পাঁজা বলেন, ‘‘রাতে দেদার বাজি ফেটেছে। আর বিভিন্ন জায়গায় তারস্বরে গান বেজেছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছেন। শব্দের এই অত্যাচার কেন হবে?’’

এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে বেড়ান শব্দ-দৌরাত্ম্যে ত্রস্ত মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন