শব্দ-তাণ্ডব এখনও অব্যাহত হুগলির নানা প্রান্তে
DJ

সামাজিক মাধ্যমে মহিলার প্রতিবাদে ডিজে বন্ধ পুলিশের

প্রজাতন্ত্র দিবসে পাড়ায় পাড়ায় চড়ুইভাতির রেওয়াজ রয়েছে। বক্স বাজিয়ে দিনভর দেশাত্মবোধক গানও নতুন নয়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৮
Share:

ডিজে-র তাণ্ডবে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে বচসা।

শীতের রাত। দশটা বেজে গিয়েছে। তারস্বরে ডিজে বাজিয়ে তখনও চলছিল উদ্দাম নাচ। তার আগে টানা ১২ ঘণ্টা ডিজে-র তাণ্ডব হজম করে অতিষ্ঠ হিন্দমোটরের তেঁতুলতলা এলাকার বাসিন্দারা। শেষে সমাজমাধ্যমে গোটা বিষয়টি তুলে ধরলেন ওই এলাকার বাসিন্দা রূপা চক্রবর্তী খান। ডিজে-র দৌরাত্ম্যে বয়স্কদের কষ্টের কথাও তাতে লিখলেন। সমাজমাধ্যমে বিষয়টি জেনে টনক নড়ে পুলিশের। উত্তরপাড়া থানার আইসি পার্থ শিকদার পুলিশ পাঠান। বন্ধ হয় অত্যাচার।

Advertisement

বুধবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের রাতের ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ-প্রশাসন সারা দিন ওই তাণ্ডবের খবর পেল না কেন? চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমাদের কেউ জানাননি। সমাজমাধ্যমে জেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

প্রজাতন্ত্র দিবসে পাড়ায় পাড়ায় চড়ুইভাতির রেওয়াজ রয়েছে। বক্স বাজিয়ে দিনভর দেশাত্মবোধক গানও নতুন নয়। কিন্তু ওই দিন উত্তরপাড়া পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে একদল মাঝবয়সি লোক ডিজে-সহযোগে কার্যত উৎপাত চালান বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, কানফাটানো আওয়াজে শিশু থেকে বয়স্করা জেরবার হন। স্থানীয় আবাসনের বাসিন্দা রূপা বিষয়টি সমাজমাধ্যমে লেখার পরই পুলিশের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। অভিযোগ, সাংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধি সেখানে গেলে উৎসবে শামিল লোকেরা জানতে চান, ছবি তোলা হচ্ছে কেন?

Advertisement

রূপা বলেন, ‘‘পরিবেশ দূষণের নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় আমাকে বা আমাদের পরিবারকে এর আগে নানা উৎপাত করে জব্দ করার চেষ্টা হয়। বুধবার রাতে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় কিছুটা দ্বিধা নিয়ে সমাজমাধ্যমে লিখি। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।’’ স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের কর্তা রোহন বাগচী ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কৈফিয়ত চান। রাত কেন, সকাল ১০টাতেও তো ডিজে বাজানো আইনে নেই।’’

মঙ্গলবার রাতে শ্রীরামপুরের মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরের কাছে বিয়েবাডির লোকজন ডিজে বাজিয়ে শোভাযাত্রা করেন বলে অভিযোগ। নির্ধারিত সময়ের পরেও বিয়েবাড়িতে মাইক বাজানোর অভিযোগও ওঠে। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী, আইসি দিব্যেন্দু দাসের কাছে অভিযোগ যায়। পুলিশ গিয়ে ডিজে ও মাইক বন্ধ করে।

জেলা জুড়ে ডিজে-র তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে দিন কয়েক আগে হুগলির জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি’কে স্মারকলিপি দিয়েছে জেলার ‘বাজি ও ডিজে বিরোধী মঞ্চ’। তাতে যে কাজ হয়নি পড়েনি, বলাই বাহুল্য। কমিশনারেট এলাকায় ডিজে রুখতে পুলিশি তৎপরতা শিথিল হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে, অভিযোগ পেলে পুলিশ ডিজে বন্ধ করছে।

পরিবেশকর্মী এবং সাধারণ মানুষের একাংশের দাবি, শুধু বন্ধ করলেই হবে না, নিষিদ্ধ ডিজে বক্স পাকাপাকি ভাবে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বুধবার ওই মঞ্চের উদ্যোগে বিভিন্ন পুরসভার পুরভোটের প্রার্থীদের উদ্দেশে পরিবেশ রক্ষার দাবি জানিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়। তাতে ডিজে-র দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অন্যতম দাবি ছিল।

ডিজে-র তাণ্ডব গ্রামীণ হুগলিতেও অব্যাহত। কয়েক মাস আগে লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হরিপালে ডিজে বাজানো বন্ধ করতে বলায় পুলিশের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয়। তার পরেও জেলার বিভিন্ন জায়গায় ডিজে-র দাপট চলছেই। সম্প্রতি ডিজে বাজানো নিয়ে গোলমালের একাধিক ঘটনা ঘটে আরামবাগ মহকুমায়। নাগরিক সংগঠনের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর পরে অবশ্য ডিজে নিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন