Primary School

Primary school: স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে না তো? আশঙ্কায় শিক্ষকরা

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল শুরুর সময়ে চার জন অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রথম বছরে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা হয় প্রায় ১০০জন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪৯
Share:

খানাকুলের রঞ্জিতবাটী জুনিয়র হাই স্কুল। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ১০। আর তাদের জন্য রয়েছেন মাত্র এক জন অতিথি শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। ফলে স্কুলের নানা কাজ বাকি পড়ে রয়েছে। স্কুলের পরিকাঠামোতেও রয়েছে বিস্তর ফাঁক। এক সময় এই স্কুল চালুর জন্য লড়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। আর এখন বেহাল এই স্কুলে সন্তানদের পাঠাতে চান না সেই অভিভাবকরাই। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগ না হলে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে খানাকুলের এই রঞ্জিতবাটি জুনিয়র হাইস্কুল।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত রঞ্জিতবাটি গ্রামে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের দাবি অনেক পুরনো। এই গ্রামে তেমন স্কুল না থাকায় গ্রামের পড়ুয়াদের পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হত জয়রামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। বন্যাপ্রবণ গ্রাম দুটির মাঝে মুণ্ডেশ্বরীর শাখা ‘কানা নদী’ বর্ষায় ভয়াবহ আকার নেয়। গ্রামবাসীর দাবি ছিল, খুদেদের নিরাপত্তার জন্য অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামে একটা স্কুল হোক। ২০১১ সালের মাঝামাঝি রঞ্জিতবাটি জুনিয়র হাইস্কুলের অনুমোদন মেলে। পঠনপাঠন শুরু হয় ২০১২ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল শুরুর সময়ে চার জন অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রথম বছরে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা হয় প্রায় ১০০জন। পরে ছাত্র-ছাত্রী বেড়ে ১৮০ ছাড়ায়। কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে চার অতিথি শিক্ষকের মধ্যে তিন জনের বয়স ৬৫ পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের মেয়াদ ফুরোয়। অবশিষ্ট এক অতিথি শিক্ষক এবং দুই স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক নিয়োগ করে তাও কোনওক্রমে স্কুল চালানো হচ্ছিল। ২০১৮ সালে ওই অতিথি শিক্ষকের মৃত্যুর পর থেকে স্কুলটি বেহাল হতে শুরু করে। ২০২০ সাল থেকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে আছেন খানাকুলের কাঁটাপুকুর প্রাইমারি স্কুল থেকে অবসর নেওয়া প্রধান শিক্ষক মদনমোহন ঘাঁটি।

Advertisement

শুধু শিক্ষক-সমস্যা নয়। পরিকাঠামোরও অভাব রয়েছে এই স্কুলে। দু’তলা ভবনের একতলায় তিনটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষকদের বসার কোনও ঘর নেই। ছাত্রদের জন্য একটি মাত্র শৌচালয়। ছাত্রী আর শিক্ষকদের জন্য পৃথক কোনও শৌচালয় নেই। পাঠাগার ও কম্পিউটার শেখার কোনও ব্যবস্থা নেই।

মদনবাবুর অভিযোগ, “স্কুলের দৈন্যদশা নিয়ে স্কুল পরির্দশককে বারবার জানানোর পরও সুরাহা কিছু হয়নি। স্রেফ শিক্ষকের অভাবে স্কুলটা বন্ধের মুখে। স্কুল উন্নয়নে যে গ্রামবাসীরা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরাও সন্তানদের সেই জয়রামপুরেই ভর্তি করাচ্ছেন।’’ অভিভাবকদের পক্ষে মন্টু বাগ, ঝন্টু সাউরাও জানান, শিক্ষক না থাকায় ঝুঁকি সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের তাঁরা অন্যত্র ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্কুলটির পরিচালন কমিটির সভাপতি কাশীনাথ মণ্ডলের অভিযোগ, “শিক্ষক নিয়োগ-সহ স্কুলের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সমস্ত স্তরে আবেদন জানানোর পরও সুরাহা মেলেনি। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩ লক্ষ টাকা মিলেছিল। ২০১৮ সালে, ওই টাকায় একটা ঘরও তৈরি করা যায়নি। ছাদ ঢালাই হয়ে পড়ে আছে। শিক্ষা নিয়ে সরকারের এই উদাসীনতা মানা যাচ্ছে না।”

বেহাল এই স্কুল প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত জেলা পরিদর্শক (আরামবাগ) সুনীতি সাঁপুই বলেন, “স্কুলের অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন