Potato Farming

‘জলদি’ আলুর ফলন কম, লোকসান বাড়ছে চাষির

বিষয়টি কৃষি দফতরের নজরে এনেছেন চাষিরা। বীজ এবং আবহাওয়ার কারণেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৭
Share:

জমি থেকে আলু তোলা হচ্ছে। গোঘাটের মাঠে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

‘জলদি’ জাতের (সময়ের কিছুটা আগে হওয়া) আলু তোলা চলছে হুগলিতে। কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি। তার উপর সে ভাবে দাম না-মেলায় বিঘাপিছু ৫-৭ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে চাষিদের হাহাকার শোনা যাচ্ছে। ফলে, চন্দ্রমুখী এবং জ্যোতি প্রজাতির আলু নিয়েও তাঁরা আশা দেখছেন না। ওই দুই প্রজাতির আলু সবে তোলা শুরু হয়েছে।

Advertisement

বিষয়টি কৃষি দফতরের নজরে এনেছেন চাষিরা। বীজ এবং আবহাওয়ার কারণেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

পুরশুড়া, গোঘাট, আরামবাগ, ধনেখালি, তারকেশ্বর ইত্যাদি ব্লকের বিভিন্ন মাঠে ‘পোখরাজ’ বা ‘এস ওয়ান’ প্রজাতির আলু চাষ হয়। যা ‘জলদি আলু’ নামেই পরিচিত। এখন ওই দুই প্রজাতির আলু মাঠ থেকে বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা বস্তা (৫০ কেজিতে এক বস্তা) দরে।

Advertisement

পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলে ১৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তাঁর খেদ, ‘‘মোট জমির বিঘা দেড়েকে পোখরাজ আলুর চাষ করেছিলাম। বিঘায় ফলন হওয়ার কথা ন্যূনতম ১০০ বস্তা। পেয়েছি ৮০ বস্তা করে। লাভ তো দূর, বিঘায় ৭-৮ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। ভাল মানের বীজের অভাব না কি আবহাওয়ার জন্য এই লোকসান, জানতে কৃষি দফতরের শরণাপন্ন হয়েছি। চন্দ্রমুখী বা জ্যোতিতেও লাভে আশা দেখছি না।”

একই ভাবে লোকসানের অভিযোগ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন গোঘাটের পশ্চিমপাড়া গ্রামের চাষি শেখ হানিফ আলি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তিন বিঘা জমিতেই পোখরাজ আলু ছিল। বিঘাপিছু ৮০ বস্তা করে ফলন পেয়েছি। মাঠ থেকে দাম পেলাম বস্তা পিছু ২১০ টাকা। ব্যাপক লোকসান হয়েছে। ক্ষতিপূরণের দাবি করছি আমরা।’’ ক্ষতির কথা শুনিয়েছেন তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার আলুচাষি নিমাই মণ্ডল, আরামবাগের বলরামপুরের দিব্যেন্দু চিনা প্রমুখও।

আলু ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, হিমঘর বন্ধ থাকার জন্য আলুর দাম উঠছে না। হিমঘর খুললে পরিস্থিতি চাষিদের অনুকূলে হবে। চাষিদের হিসাবে, সার, বীজ-সহ সব ধরনের খরচ মিলিয়ে বিঘাপিছু আলু চাষে এ বছর খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। সেই অনুপাতে বস্তাপিছু ৩৫০-৪০০ টাকা দাম হলে খরচ উঠে। চাষিদের অনুমান, বীজ এবং আবহাওয়ার জন্যই এই হাল। তাঁরা জানান, বীজ অনেক ক্ষেত্রে হিমঘরের জমানো আলু থেকেই বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া, পঞ্জাবের বীজ বলে বাজার থেকে যে সব বীজ কেনা হয়েছে, তারও গুণমান খারাপ।

জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে আলুর কম ফলেনের খবর মিলছে বলে স্বীকার করেছেন জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রিয়লাল মৃধা। তিনি বলেন, “আরামবাগের কিছু চাষি ফলন কমের কথা আমাদের বলেছেন। খতিয়ে দেখতে দফতরের দল গিয়েছিল। সঠিক কারণ জানতে জমির মাটি এবং ফসলের নমুনা পরীক্ষার জন্য দফতরের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, আলুর মরসুমের মাঝখানে বার দুয়েক তাপমাত্রার ওঠাপড়ার কিছুটা প্রভাবও পড়েছে।’’

আর বিপুল লোকসানের সুরাহা?

ওই কৃষিকর্তার মতে, একমাত্র বিকল্প চাষই ভরসা হতে পারে। তাঁর হিসেবে, চাষিরা আলু চাষে বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা খরচ করছেন। সে জায়গায় এক বিঘা সর্ষে চাষে খরচ মাত্র ৫ হাজার টাকা। ধানের পরেই আলুর পরিবর্তে সর্ষে চাষ করলে বিঘাপ্রতি ২০০ কেজি সর্ষে মিলবে। ৫ হাজার টাকা খরচ করে চাষি অনায়াসে ১০-১২ হাজার টাকা পেতে পারেন। তিনি বলেন, “বিকল্প চাষের কথ আমরা বললেও বেশির ভাগহ চাষিই আলু থেকে সরতে চাইছেন না।’’

কৃষি দফতর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৯৩ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে পৃথক ভাবে কতটা এলাকায় জলদি জাতের আলু চাষ হয়েছে, সেই হিসাব তাদের কাছে নেই।

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাম সংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়মিত পাঠাচ্ছি। সরকারই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন