Education

উন্নতি কোন পথে! বাজেট বরাদ্দ কমায় প্রশ্ন কলেজে

শিক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, জাতীয় শিক্ষানীতি সঠিক ভাবে রূপায়ন করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের দরকার, তার তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

শিক্ষাক্ষেত্রে কোপ পড়েছে বাজেট বরাদ্দে। তাতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে শিক্ষক মহলের একাংশের আশঙ্কা। সোমবার কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ৬.১৩% কমেছে। তাতেই চিন্তার সুর কলেজ-শিক্ষকদের মুখে।

Advertisement

কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের একাংশের খেদ, গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা আসার পরিমাণ কমেছে। এ বার তা আরও কমবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অসীম দে বলেন, ‘‘বাজেট সংকোচন নিয়ে চিন্তায় আছি। কেন এটা করা হল, বোধগম্য হচ্ছে না। কলেজে শিক্ষার বিষয় দেখার পাশাপাশি ইউজিসি বিভিন্ন খাতে তাদের টাকা দিত। এখন তাদের বরাদ্দ বন্ধ। আবার নতুন একটা সংস্থা ঘোষণা করে বলা হল, তারা এ বার সবটা দেখবে। আমরা বিভ্রান্ত।’’

আরামবাগ গার্লস কলেজ অধ্যক্ষ সৈয়দ সাজিদুল ইসলামের বক্তব্য, বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়ার কোপ ঠিক কোন জায়গায় পড়বে, তা পরিস্কার নয়। তবে নিশ্চিতভাবেই শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। তাঁর ধারনা, বিশেষত মফঃস্বলের কলেজ, যাদের নানা পরিকাঠামোর অভাব আছে, তারা ধাক্কা খাবে। রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজের উপাধ্যক্ষ রমেশ কর বলেন, ‘‘গবেষণার কাজে টাকা মিলছে না ইউজিসি থেকে। সেমিনার আয়োজনের ক্ষেত্রেও তাই। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে এটা চলছে। বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ কমে যাওয়ায় আরও কিছুতে কোপ পড়ার আশঙ্কা তো থাকছেই।’’

Advertisement

প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকেও এর অল্প-বিস্তর প্রভাব পড়তে পারে বলে শিক্ষকদের আশঙ্কা। আরামবাগের কাপসিট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারিমোহন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘যে শিক্ষানীতির কথা বলা হচ্ছে, তা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা পয়সায় শিক্ষা, ইন্টারনেট সংযোগ সবই বিঘ্নিত হবে।’’ খানাকুলের কুমারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ নাসারুল গাওসের আশঙ্কা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যহত হবে। কোপ পড়তে পারে মিড-ডে মিলেও।

পুরশুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কারও কারও মনে হচ্ছে, মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান, অতিরক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ ইত্যাদিতে বরাদ্দ কমবে। পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বা অন্য সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। নতুন নিয়োগের রাস্তাও জটিল হতে পারে। টাকার অভাব হলে শূন্যপদে স্থায়ীর পরিবর্তে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শিক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, জাতীয় শিক্ষানীতি সঠিক ভাবে রূপায়ন করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের দরকার, তার তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম। বৈদ্যবাটী বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা এবিটিএর হুগলি জেলার নেতা প্রিয়রঞ্জন ঘটক বলেন, ‘‘একলব্য স্কুলের উপরে বেশি ফোকাস করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে কীউপকার হবে, বুঝে পেলাম না।রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে টাকা না বাড়ালে উন্নয়নে প্রভাব পড়বেই। শিক্ষায় ব্যয় কমানো মানে তো জাতির মেরুদণ্ডে আঘাত!’’

মিড-ডে মিলের বরাদ্দ কমলে, তার ফল কী হবে, তা হাওড়া জেলার শিক্ষকমহলের একাংশ ধন্দে। তাঁদের বক্তব্য, লকডাউন পর্বে পড়ুয়াদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। রান্না করা খাবারের থেকে এতে খরচ কম। শুকনো খাবার দেওয়ার রীতি বহাল থাকলে বরাদ্দ কিছুটা কমলেওতার বিশেষ প্রভাব পড়বে না।

অনেকে আবার মনে করছেন, মিড-ডে মিলের মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে কাটছাঁট করা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন