Uttarpara Incident

ইফ্‌ফাতের বন্ধ ফোনেই শ্রেয়াংশু খুনের সূত্র, দাবি

পুলিশ জানিয়েছে, কানাইপুরের আদর্শনগরে শান্তাদের বাড়িতে নিয়মিতই থাকতেন ইফ্‌ফাত। বাড়ির অন্যেরা বিষয়টি ভাল ভাবে না নিলেও চক্ষুলজ্জা এবং অশান্তির ভয়ে কিছু বলতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

আদালতের পথে শান্তা (লাল শাল)। — নিজস্ব চিত্র।

একটি বন্ধ ফোনের সূত্র। তাতেই কোন্নগরের বালক শ্রেয়াংশু শর্মা খুনের কিনারা।

Advertisement

এমনটাই দাবি করছেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। তদন্তকারীরা জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যে সময়ের মধ্যে বালকটি খুন হয়, সেই সময় তার মা শান্তার
বান্ধবী ইফ্‌ফাত পরভিনের মোবাইল বন্ধ ছিল। তার পরে মাত্র ২০ সেকেন্ডের জন্য সে ফোন খোলে। আবার বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ওই ২০ সেকেন্ডে ইফ্‌ফাতের ফোন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল শান্তার সঙ্গে। জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘কাজ হয়ে গিয়েছে’— এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের।

ইফ্‌ফাতের মোবাইলের কল লিস্ট খুঁটিয়ে দেখে এখানেই খটকা লাগে তদন্তকারীদের। তার উপরে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে ইফ্‌ফাতকে দেখা গেলেও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন্নগরে আসার বিষয়টি সে বেমালুম চেপে যায়। পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন বেলা তিনটে নাগাদ খিদিরপুরে বাড়ি থেকে বের হয় ইফ্‌ফাত। বাড়ি ফেরে রাত সাড়ে ৮টায়। শর্মাবাড়িতে আনাজ কাটার ছুরি সাধারণত রান্নাঘরের ড্রয়ারে থাকে। পুলিশের মনে হয়েছিল, পরিচিত ছাড়া ওই ছুরির কথা কারও জানার কথা নয়। এই সব মিলিয়েই তদন্তকারীদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ইফ্‌ফাতের উপরে। মঙ্গলবার শান্তা-ইফ্‌ফাতকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের। তাঁদের আরও দাবি, খুনের পুরো পরিকল্পনার পিছনে শ্রেয়াংশুর মা আগাগোড়া ছিলেন। সেইমতো তার বান্ধবীই পুরো ঘটনা ঘটিয়েছে। বুধবার শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হলে দু’জনকেই ৯ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, কানাইপুরের আদর্শনগরে শান্তাদের বাড়িতে নিয়মিতই থাকতেন ইফ্‌ফাত। বাড়ির অন্যেরা বিষয়টি ভাল ভাবে না নিলেও চক্ষুলজ্জা এবং অশান্তির ভয়ে কিছু বলতেন না। ইদানীং এই বাড়িতে ইফ্‌ফাতের রাত্রিবাস বেড়ে গিয়েছিল। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই দুই মহিলা দিনে অন্তত ১০-১২ বার মোবাইলে কথা বলতেন। বহু রাত পর্যন্ত কথা হত। অনেক সময় কথাবার্তা এক ঘণ্টা পেরিয়ে যেত। শর্মাবাড়িতে এলে ইফ্‌ফাত শান্তার সঙ্গেই ঘুমোত।’’

পুলিশের বক্তব্য, শ্রেয়াংশু ইদানীং মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ত। তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হত। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘‘মা এবং বান্ধবীকে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে বার বার দেখে ফেলার কারণেও শ্রেয়াংশুর আচরণ অন্য রকম হয়ে যাচ্ছিল কি না এবং সেই কারণেই ছেলেটিকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কি না, সেটা দেখার।’’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সোমশুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা মনোরোগের কারণে ঘটতে পারে। দু’জনের সম্পর্কের মাঝে ছেলেটির টান যাতে না থাকে, সেই মানসিক অবস্থা থেকেও হতে পারে। দু’জনের অন্তরঙ্গ কোনও মুহূর্ত ছেলেটি দেখে ফেলার কারণেও হতে পারে। পুরোটাই তদন্তসাপেক্ষ।’’

বুধবার শ্রীরামপুরে আদালতে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে শান্তার দাবি, ‘‘আমি নির্দোষ। নিজের বাচ্চাকে কেউ মারতে পারে! পরভিন আমার ভাল বন্ধু ছিল। এইটুকুই। ওই দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরভিন আমাদের বাড়িতে এসেছিল সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে।’’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর থেকেছে ইফ্‌ফাত। ওড়নায় তার মুখ ঢাকা ছিল। খুনের পরের দিন শর্মাবাড়িতে এসে শান্তাকে জড়িয়ে ধরে ‘সমবেদনা’ জানাতেও দেখা যায় ইফ্‌ফাতকে।

শ্রেয়াংশুর বাবা পঙ্কজ শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বেশি কিছু বলব না। দোষীর ফাঁসি চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন